নারী শিক্ষার উপর তালিবানের সেন্সরশিপ ভীত নাড়িয়ে দিচ্ছে গোটা আফগানিস্তানের। তাদের এই অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচারণ শুধু আন্তর্জাতিকভাবেই হচ্ছে না বরং দেশের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে জনমত। প্রতিবাদ জানাচ্ছে দেশটির ছেলে শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, তালিবান আফগানিস্তানে শুধু ছেলে ও পুরুষদের স্কুলে ফিরতে বলেছে এবং মেয়েদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও মেয়েদের স্কুলে ফেরার প্রতি সমর্থন জানিয়ে অনেক ছেলে স্কুলে ফিরছে না। রবিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দশম শ্রেণির ১৮ বছর বয়সের রহুল্লাহ নামের এক ছাত্র বলেন, নারীরা আমাদের সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী। মেয়েদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমি ক্লাসে যাবো না।
কাবুলের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক নাজিফে জানান, পুনরায় স্কুল চালুর জন্য তারা কিছু পরিবর্তন এনেছেন। তিনি বলেন, মেয়েরা সকালে এবং ছেলে দুপুরে ক্লাস করবে। পুরুষ শিক্ষকরা ছেলেদের এবং মেয়েদের পড়াবেন নারী শিক্ষকরা।
সূত্র মতে, শনিবার প্রাথমিক স্কুলের অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুলে গেছে। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ুয়া মেয়েরা এখনও জানে না তাদের জন্য স্কুল খোলা হবে কিনা।
মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ানো শিক্ষক হাদিস রিজায়ি বলেন, মেয়েদের মন ভেঙে গেছে এবং পড়াশোনা পুনরায় শুরুর জন্য তারা সরকারের ঘোষণার অপেক্ষায় আছে।
একটি স্কুলের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজা বলেন, মেয়েদের শিক্ষা হলো একটি প্রজন্মকে সঠিক পথে নিয়ে আসা। ছেলেদের শিক্ষা হয়তো পরিবারকে সহযোগিতা করে, কিন্তু মেয়েদের শিক্ষা পুরো সমাজকে প্রভাবিত করে। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে মেয়েরা স্কুলে ফিরতে এবং নিজেদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারে।
এর আগে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করএ তালিবান। দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার থেকে খুলছে আফগানিস্তানের মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলো।
কিন্তু তালিবানের নতুন সরকার শুধুমাত্র ছেলেদের স্কুলে আসার নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় নারীদের স্কুলে আসার কোনো উল্লেখ নেই।
গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তালিবান সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের মাধ্যমিক স্তরের সব স্কুলে শিক্ষাক্রম পুনরায় শুরু হবে।
তালিবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই ঘোষণায় জানিয়েছে, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
তবে নারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ফিরতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তালিবান সরকারের এই আদেশে বহু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিবান সরকারের এই ঘোষণার পর আফগানিস্তান হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
এদিকে, মেয়েদের স্কুল যাওয়ার কোনো নির্দেশনা না আসায় আফগানিস্তানে নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে তারা গভীর উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ বলেছে, সব বয়সী মেয়েদের জন্য আর দেরি না করে পুনরায় শিক্ষা শুরু করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২৩০২
আপনার মতামত জানানঃ