আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, তাতে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে পেন্টাগন। কাবুল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আগের দিন ওই ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের তদন্তে জানা যায়, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট ভেবে গাড়িতে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যার বলি হয় একটি পরিবারের সদস্যরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৯ আগস্টের ওই হামলায় এক ত্রাণকর্মী ও তার পরিবারের অপর ৯ সদস্য নিহত হয়। নিহত ১০ জনের মধ্যে সাত শিশু রয়েছে। সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স দুই বছর।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালিবানের হাতে চলে যাওয়ার পর দেশটির নাগরিকেরা দেশ ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হন। তাদের উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যখন ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যস্ত, তখন বিমানবন্দরে পরপর দু’টি হামলা করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসের খোরাসান শাখা।
এই দুই হামলার মধ্যে একটি ছিল আত্মঘাতী, অপরটি ছিল গাড়িবোমা হামলা। এতে অন্তত ১৭০ বেসামরিক নাগরিক ও ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হন। আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের আফগানিস্তান শাখা আইএস-কে (ইসলামিক স্টেট–খোরাসান) ওই হামলার দায় স্বীকার করে।
আইএসের সেই জোড়া হামলার জবাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিলো জোড়া হামলার মাধ্যমেই। প্রথম দফায় ২৭ আগস্ট আফগানিস্তানের নানগাহার প্রদেশে ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন সেনাবাহিনী, তাতে আইএস খোরাসান শাখার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড নিহত হয়ে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টগন।
দ্বিতীয় দফায় গত ২৯ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে জামিরি আখমাদি নামে এক স্থানীয় আফগানের বাড়িতে ড্রোন হামলা করা হয়েছিল। মার্কিন সেনাবাহিনীর ধারণা ছিল, ২৬ আগস্ট যে বিমাবন্দরে আত্মঘাতী হামলার পাশপাশি যে গাড়িবোমা হামলা হয়েছিল তাতে আখমাদি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
এ সংক্রান্ত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আইএস খোরাসানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, কাবুলের এমন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ব্যাগে করে কিছু নিয়ে গাড়ির পেছনের বুটে রাখছেন আখমাধি। তারপর গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ২৫ আগস্ট ঘটেছিল এই ঘটনা।
কিন্তু পরে গেছে, ওই ব্যাগে বিস্ফোরক নয়, পানির বোতল ছিল। আরও জানা গেছে, আখমাধির সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন নামে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে চাকরি করতেন এবং কাবুল তালিবান দখলে যাওয়ার পর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ড্রোন হামলার বিষয়ে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কর্মকর্তা জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, ত্রাণকর্মীর গাড়িটি আট ঘণ্টা ধরে ট্র্যাক করা হচ্ছিল। ধারণা ছিল, গাড়িটি আইএসের স্থানীয় শাখা আইএস-কে সংশ্লিষ্ট।
ম্যাকেঞ্জির মতে, হামলাটি ছিল ‘বেদনাদায়ক ভুল’। যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত অনুযায়ী, জামাইরি আহমাদি নামের ত্রাণকর্মী কাবুল বিমানবন্দর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নিজ বাড়িতে গাড়িতে চড়ার পরপরই হামলা হয়।
বোমা হামলার পর আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়, যাতে যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল, গাড়িতে বিস্ফোরক ছিল। তবে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলিন্ডার থেকে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হতে পারে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা এক অনুবাদকও রয়েছেন, যার নাম আহমদ নাসের।
তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ‘আমরা এ পর্যায়ে এসে জানতে পেরেছি, আহমাদির সঙ্গে আইএস-খোরাসানের কোনো যোগসূত্র ছিল না। ওই দিন (হামলার সময়) তার কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ অহিংস ছিল এবং সেটি ছিল আমাদের মনে করা আসন্ন হুমকির একেবারে উল্টো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ভয়াবহ এ ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সচেষ্ট হব।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২০১
আপনার মতামত জানানঃ