১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবানের নেতারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেও বাস্তবে তার দেখা মিলছে না। রাজধানী কাবুলসহ অন্যান্য অঞ্চলে তালিবানের হাতে সাংবাদিকদের নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এবার দেশটির দুজন আফগান সাংবাদিককে পিটিয়েছে তালিবান যোদ্ধারা। কারণ তারা নারীদের আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। যদিও তালিবান কাবুল নিয়ন্ত্রণের পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করবে তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তালিবানের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিকদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছবি পোস্ট করেছেন লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের পরারাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিবেদক মার্কাস ইয়াম, অন্যটি প্রকাশ করেছে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম ইটিলাট্রোজ।
ইয়ামের পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, অন্তর্বাস পরা দুই সাংবাদিকের গাঁয়ে আঘাতের চিহ্ন। ইটিলাট্রোজও একই ছবি পোস্ট করেছে। তালিবানের হাতে নির্যাতিত ওই দুই সাংবাদিক আফগান সংবাদমাধ্যম তাকির কর্মী বলে জানা গেছে।
ইটিলাট্রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দারায়াবি ও নাকদি নামের ওই দুই সংবাদকর্মী গতকাল বুধবার কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কারত-এ-চর এলাকায় নারীদের তালিবানবিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে যান। পরে তালিবান সদস্যরা তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেন।
নাকদি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল তারা আমাকে মেরে ফেলবে। তারা আমাদের দেখে উপহাস করছিল।’
ইটিলাট্রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিবান আরও তিন সাংবাদিককে অপহরণ করেছিল। এই সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যম ইউরোনিউজের স্থানীয় প্রধান। পরে তাদের কোনো ক্ষতি না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইটিলাট্রোজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টিওএলও নিউজের ক্যামেরা পার্সন ওয়াহিদ আহমাদি এবং আরিয়ানা নিউজের ক্যামেরাপার্সন সামিমকে গ্রেপ্তার করেছে তালিবান।
এর আগে তালিবানের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণার একদিন পর কাবুলভিত্তিক দেশটির দৈনিক পত্রিকা ইতিলাট্রোজ এর পাঁচজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়। দেশটিতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে গত তিন মাসে মোট ৫১টি গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। হত্যা নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা।
আফগানিস্তানের সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। সম্প্রতি আফগানিস্তান তালিবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সেই উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। অনেকেই দেশত্যাগ করলেও যারা রয়ে গেছেন তারা এখন গ্রেফতার হচ্ছেন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানাচ্ছে, ২০২০ সালে যেখানে কাবুলে অন্তত ৭০০ মহিলা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তালিবানের প্রত্যাবর্তনের পরে সেই সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭৬। তালিবান সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার বার্তা দিলেও হেনস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকেরা।
اطلاعات روز: تقی دریابی و نعمتالله نقدی، دو گزارشگر روزنامه اطلاعات روز پس از بازداشت توسط طالبان، به شدت مورد لتوکوب قرار گرفتهاند.
آثاری از شلاق و کیبل بر سر، صورت و بدن این دو گزارشگر اطلاعات روز به چشم میخورد. pic.twitter.com/0vuEwYW28b— اطلاعات روز | Etilaatroz (@Etilaatroz) September 8, 2021
কাবুল দখলের পরে বহু সাংবাদিকের বাড়িতে হানা দিয়েছে তালিবান যোদ্ধারা। জার্মান সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিকের পরিজনকে হত্যাও করা হয়েছে। এমনকি লাইভ টেলিভিশন শোয়ে সংবাদ পাঠককে ঘিরে রয়েছে বন্দুকধারীরা, সেই দৃশ্যও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালিবান শাসনে গণমাধ্যম বলতে কিছু ছিল না। বাহিনীটি টেলিভিশন, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমকে ইসলামি মতাদর্শের বিরোধী বলে গণ্য করত। এরপর মার্কিন অভিযানে তালিবানের পতন হওয়ার পর গণমাধ্যম খাতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি আসে। এখন আবার ফিরে এসেছে তালিবান শাসন। বন্ধ হচ্ছে গণমাধ্যম; হত্যা-গ্রেপ্তার-নির্যাতন করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। তাই বাড়ছে শঙ্কা; ভীতিমুক্ত হতে পারছেন না দেশটির সাংবাদিকেরা।
জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছাড়া অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের সত্য প্রকাশের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভিডিও: ভয়েজ অব আমেরিকা
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪১৮
আপনার মতামত জানানঃ