১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবানের নেতারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেও বাস্তবে তার দেখা মিলছে না। রাজধানী কাবুলসহ অন্যান্য অঞ্চলে তালিবানের হাতে সাংবাদিকদের নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে সংবাদ সংগ্রহের সময় তালিবানের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন একজন অস্ট্রেলীয় নারী সাংবাদিক।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের অস্ট্রেলীয় কলামিস্ট লিন ও’ডোনেল অভিযোগ করেছেন যে, তালিবানের কারাগারে পাঠানোর হুমকির মুখে তিনি তার করা কিছু প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তার নিজের লেখা নিবন্ধগুলো মিথ্যা বলে একাধিক টুইট করতেও তাকে বাধ্য করে তালিবান।
যদিও পরে তাকে মুক্তি দেয়া হয় ও আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া বিমানে উঠতে দেয়া হয়।
তালিবানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, লিন ও’ডোনেলকে মিথ্যা প্রতিবেদন করার জন্য আটক করা হয়েছিল।
লিন ও’ডোনেল জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তিনি বেশ কয়েক বছর কাজ করেছেন। এক বছর আগেও তিনি সেখানে ছিলেন। দেশটি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা জানতে তিনি আবার কাবুল যান। তিনি সরাসরি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন।
পরে তালিবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার তিন দিনের ইঁদুর খেলা শুরু হয়। তাকে আটক করা হয়, গালাগাল ও জেলের হুমকি দেয়া হয় এবং তার প্রতিবেদনের উৎস প্রকাশে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তবে ও’নেইল উৎস প্রকাশে অস্বীকার করেন।
তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে তালিবান ‘আইন ভঙ্গ করা’ ও ‘আফগান সংস্কৃতিকে আপত্তিকর’ করার অভিযোগ আনে।
তবে তালিবান বলছে, তাকে কোনো উৎস প্রকাশে চাপ প্রয়োগ করা হয়নি কারণ এলজিবিটি সম্প্রদায় ও তালিবান যোদ্ধাদের আফগান নারীদের জোরপূর্বক বিয়ের বিষয়ে তার করা প্রতিবেদনগুলো বানোয়াট।
তালিবান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার তিন দিনের ইঁদুর খেলা শুরু হয়। তাকে আটক করা হয়, গালাগাল ও জেলের হুমকি দেয়া হয় এবং তার প্রতিবেদনের উৎস প্রকাশে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের জন্য দেশটি প্রতিকূল জায়গায় পরিণত হয়েছে।
তালিবান দখলের পর থেকে আফগানিস্তানকে যে অবক্ষয়গুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো গণমাধ্যম। দেশটিতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে গত কয়েক মাসে মোট ৫১টি গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। হত্যা নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালিবান শাসনে গণমাধ্যম বলতে কিছু ছিল না। বাহিনীটি টেলিভিশন, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমকে ইসলামি মতাদর্শের বিরোধী বলে গণ্য করত। এরপর মার্কিন অভিযানে তালিবানের পতন হওয়ার পর গণমাধ্যম খাতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি আসে। এখন আবার ফিরে এসেছে তালিবান শাসন। বন্ধ হচ্ছে গণমাধ্যম; হত্যা-গ্রেপ্তার-নির্যাতন করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। তাই বাড়ছে শঙ্কা; ভীতিমুক্ত হতে পারছেন না দেশটির সাংবাদিকেরা।
গত বছর ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালিবানরা নারীদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করছে। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখনও বন্ধ রয়েছে। তালেবান বলছে, মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি সাময়িক। খুব শিগগিরই খুলে দেয়া হবে।
তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার শুরু থেকে নারী স্বাধীনতাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় ছিলো যা সত্যিকারের রূপ নিতে শুরু করেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে নারী সাংবাদিকের সংখ্যা ছিল ৭০০। সেই সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে এসে ঠেকেছে ৩৯-এ। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স স্যানস ফ্রন্টিয়ার্স (আরএসএফ) বা রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে আফগানিস্তানে সক্রিয় ছিল ১০৮ টি সংবাদমাধ্যম। এই সংবাদমাধ্যমগুলোতে চাকরি করতেন মোট ৪ হাজার ৯৪০ জন। এই কর্মীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮০ জন এবং তাদের মধ্যে সাংবাদিক ছিলেন ৭০০ জন।
কিন্তু ১৫ আগস্ট তালিবান বাহিনী কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি। বর্তমানে পুরো আফগানিস্তানে মাত্র ৩৯ জন নারী সাংবাদিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স। তালিবান কাবুল দখলের আগে ও পরে নারী সাংবাদিকদের ঘরে থাকতে বাধ্য করা, হয়রানি এমনকি মারধোর পর্যন্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ