তালিবান দখলের পর থেকে আফগানিস্তানকে যে অবক্ষয়গুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো গণমাধ্যম। দেশটিতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে গত তিন মাসে মোট ৫১টি গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। হত্যা নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। টলো নিউজের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইয়াহু নিউজ।
এরই ধারাবাহিকতায় তালিবানের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণার একদিন পর কাবুলভিত্তিক দেশটির দৈনিক পত্রিকা ইতিলাট্রোজ এর পাঁচজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ বুধবার দৈনিকটির প্রধান সম্পাদক জাকি দারিয়াবি এই তথ্য জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম টলো নিউজ এক টুইট বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই টুইট বার্তায় গ্রেফতার পাঁচ সাংবাদিকের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তাদের নাম, পদবী কিংবা কোনা পরিচয় সম্পর্কে সেখানে কিছু জানানো হয়নি।
Five journalists from Etilaatroz, a daily newspaper in Kabul, have been arrested by Taliban, Zaki Daryabi, the editor in chief of the newspaper, said today.#TOLOnews pic.twitter.com/TdyxCPyWhO
— TOLOnews (@TOLOnews) September 8, 2021
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) সম্প্রতি আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বন্ধ করতে এবং সাংবাদিকদের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে তালিবানের প্রতি আহ্বান জানায়।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংগঠন ও মিডিয়া-সমর্থিত সংগঠনগুলোর কাছে খোলা চিঠি লেখেন আফগান সাংবাদিকরা। চিঠিতে তালিবান হুমকি থেকে তাদের রক্ষার আহ্বান জানান তারা।
দেড়শ সাংবাদিকের ওই চিঠিতে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার ও সম্পত্তির ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ ও হুমকির কথা বিবেচনা করে জাতিসংঘ ও দাতা দেশগুলোর কাছে জীবন ও পরিবারের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
আফগানিস্তানের সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। সম্প্রতি আফগানিস্তান তালিবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর সেই উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। অনেকেই দেশত্যাগ করলেও যারা রয়ে গেছেন তারা এখন গ্রেফতার হচ্ছেন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানাচ্ছে, ২০২০ সালে যেখানে কাবুলে অন্তত ৭০০ মহিলা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তালিবানের প্রত্যাবর্তনের পরে সেই সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭৬। তালিবান সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার বার্তা দিলেও হেনস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকেরা।
কাবুল দখলের পরে বহু সাংবাদিকের বাড়িতে হানা দিয়েছে তালিবান যোদ্ধারা। জার্মান সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিকের পরিজনকে হত্যাও করা হয়েছে। এমনকি লাইভ টেলিভিশন শোয়ে সংবাদ পাঠককে ঘিরে রয়েছে বন্দুকধারীরা, সেই দৃশ্যও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালিবান শাসনে গণমাধ্যম বলতে কিছু ছিল না। বাহিনীটি টেলিভিশন, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যমকে ইসলামি মতাদর্শের বিরোধী বলে গণ্য করত। এরপর মার্কিন অভিযানে তালিবানের পতন হওয়ার পর গণমাধ্যম খাতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি আসে। এখন আবার ফিরে এসেছে তালিবান শাসন। বন্ধ হচ্ছে গণমাধ্যম; হত্যা-গ্রেপ্তার-নির্যাতন করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। তাই বাড়ছে শঙ্কা; ভীতিমুক্ত হতে পারছেন না দেশটির সাংবাদিকেরা।
জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছাড়া অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশটিতে সংবাদমাধ্যমের সত্য প্রকাশের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬০৬
আপনার মতামত জানানঃ