সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদা চেয়ে যুবককে চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করার অভিযোগে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী যুবক মো. রিপন শেখ বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৬ এ মামলাটি করেন।
আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে গন্য করার জন্য লৌহজং থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী রিপন শেখ লৌহজং উপজেলার কুমার ভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার মৃত সাহেদ শেখের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী রুবি আক্তারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তার ভাই ও বোন মিলে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে বাড়িতে এসে রিপন শেখকে মারধর করে। পরে একই দিন অভিযুক্ত এসআই আবু তাহের মিয়া সিভিল পোশাকে রিপনকে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে থানায় নিয়ে যান।
এরপর থানায় চোখ-মুখ বেঁধে তাকে মারধর করে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। রিপন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই আবু তাহের শেখ তাকে মারধর করে থানা থেকে বের করে দেন।
পরে তিনি চিকিৎসা নিয়ে মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জ আদালতে এসে এসআই আবু তাহের ও নিজের স্ত্রীসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ সময় আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এফআইআর হিসেবে গন্য করার জন্য লৌহজং থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে রিপন শেখ বলেন, বনিবনা না হওয়ায় আমার স্ত্রী রুবি আক্তার তার ভাই-বোনদের নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমাকে মারধর করে। পরে এসআই আবু তাহের সিভিল পোশাকে এসে আমাকে জোর করে ধরে থানায় নিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে বেত্রাঘাত করেন।
এ সময় তিনি আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে এসআই আবু তাহের আমাকে মারধর করে থানা থেকে বের করে দেন এবং বলেন- ‘তোর স্ত্রীকে বাড়ি লিখে না দিলে তোকে জানে মেরে ফেলব।’
মামলার বাদী রিপন শেখের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোজিনা ইয়াসমিন বলেন, রিপন শেখের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গন্য করার জন্য লৌহজং থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাতে অভিযুক্ত এসআই আবু তাহেরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে দেশের একটি অনলাইন পত্রিকা। ওই পত্রিকার সূত্র মতে জানা যায়, তিনি প্রথমে সকালে ছাড়া এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। পরে তার বিরুদ্ধে আদালতে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘সত্য সত্য সত্য’ বলে ফোন রেখে দেন।
এ প্রসঙ্গে লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আদালত থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লৌহজং-শ্রীনগর সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এখনো আমাদের হাতে আদালত থেকে মামলার কোনো কাগজপত্র এসে পৌঁছেনি। আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন অপরাধ দমন না করে পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই বারবার জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। এর মধ্য দিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ বা ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির দুর্বলতা এবং পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে শুধু নজরদারি বাড়ানো নয়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনতে পারলে অনেকাংশে কমানো সম্ভব পুলিশ সদস্যদের অপরাধ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৪৭
আপনার মতামত জানানঃ