করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি থাকায় দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। সূত্র মতে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বারডেম হাসপাতালে চলমান একটি গবেষণা বলছে, করোনার মধ্যে ব্যাপক বেড়েছে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার। বর্তমানে দেশে ২ কোটির কাছাকাছি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। করোনা মহামারিতে এই আক্রান্তের হার আরও বাড়তে পারে বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের।
তবে গবেষণাটির চূড়ান্ত ফলাফল পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। এদিকে, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) দেয়া সবশেষ তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে এই রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট জনগোষ্ঠীর ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
দেশে এই রোগের বর্তমান চিত্র
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য বলছে, ডায়াবেটিস আক্রান্তের ভিত্তিতে পৃথিবীর দেশগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে আছে ডায়াবেটিস বাড়ছে না এমন দেশগুলো। দ্বিতীয় শ্রেণির দেশগুলোয় ডায়াবেটিস বাড়ছে, তবে উদ্বেগজনক নয়। তৃতীয় শ্রেণির দেশগুলোতে ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হার আকাশচুম্বী। বাংলাদেশ আছে এই দেশগুলোর তালিকায়।
প্রসঙ্গত, দেশে বেশির ভাগ লোক টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে বয়স্করা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেক দেশ আছে ৪০ থেকে ৪৫ বছর না হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে কেউ আক্রান্ত হয় না। তবে দেশে পাঁচ বছরের নিচের শিশুরাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির দেয়া তথ্য বলছে, দেশে গর্ভকালীন নারীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া, সন্তান জন্মদানের এক বছরের মধ্যে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।
পাশাপাশি এই কারণে গর্ভে শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে এর প্রভাবে। এছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ৪০ শতাংশ সন্তান স্বাভাবিকভাবেই ডায়াবেটিসের শিকার হয়।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ) বিভাগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নেয়ার পরিসংখ্যান বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নেয়ার সংখ্যা সম্প্রতি দ্বিগুণ বেড়েছে।
বিএসএমএমইউ চিকিৎসক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের দেশে এটি আরও ভয়াবহ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের মৃত্যুর ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী ডায়াবেটিস।’
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ২০২২ সালে ডায়াবেটিসের যদি কোনো রোগী না থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে হৃদ ও কিডনির প্রায় কোনো রোগীই থাকবে না।’
করোনা ভাইরাস ও ডায়াবেটিস
দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৬ জনের দেহে। এর মধ্যে ১ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সংখ্যার হিসাবে দেখা গেছে, করোনামুক্ত হওয়ার পর ১৫ হাজার মানুষ নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনার কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার এটি মূল কারণ। করোনায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। করোনা সেরে গেলেও এই ডায়াবেটিস কিন্তু আজীবন থেকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্দেশনা আসছে এই মহামারির পর ডায়াবেটিসের প্রকোপ আরও বাড়বে।
সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর যে তথ্য দিয়েছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী আছে তার চেয়ে দ্বিগুণ। বর্তমানে দেশে ২ কোটির কাছাকাছি ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮১২
আপনার মতামত জানানঃ