বেশ বড় একটা সময় জুড়েই বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার খবর নিয়মিতই আসছে। বিপন্ন প্রজাতির তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। বিশেষত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় সামনে আসার পর প্রজাতি বিলুপ্তির বিষয়টি সব সময়ই আলোচনায় রয়েছে। এরই মধ্যে নতুন একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের কমপক্ষে ৩০ ভাগ বন্য প্রজাতির গাছ বিলুপ্তির মুখে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকিতে রয়েছে সাড়ে ১৭ হাজারের মতো প্রজাতি। যা হুমকিতে থাকা স্তন্যপায়ী, পাখি, উভয়চর ও সরীসৃপের প্রজাতির সম্মিলিত সংখ্যার দ্বিগুণ।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, এই ঝুঁকিতে রয়েছে অতি পরিচিত ওক, ম্যাগনোলিয়া থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কাঠের গাছ। সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলো বন ধ্বংস ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য হুমকি মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে ৬০ হাজার প্রজাতির মতো গাছ রয়েছে। এই প্রথমবারের মতো জানা গেল, তাদের মধ্যে কোন কোন প্রজাতির সংরক্ষণ প্রয়োজন। মূলত প্রতিটি প্রজাতিই বাস্তুসংস্থানে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তাই দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিমধ্যে ১৪২টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ৪৪২টি রয়েছে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে, যাদের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির গাছ রয়েছে ৫০টিরও কম।
জলবায়ু পরিবর্তন, চরম আবহাওয়া ও সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি গাছের জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে গবেষকেরা জানান, সংরক্ষণের প্রচেষ্টাই হলো ভবিষ্যতের জন্য আশা। পাশাপাশি তারা টিকে থাকা বন সংরক্ষণের পাশাপাশি এর আয়তন বাড়ানোয় জোর দেন।
গবেষকরা জানান, বৃক্ষ প্রজাতির এ বিলুপ্তির তথ্য ভবিষ্যৎ বিলুপ্তি ঠেকাতে বড় ধরনের সহযোগিতা করতে পারে। এ বিষয়ে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এলিস হামফ্রিস বলেন, ‘কোন কোন উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরির লক্ষ্যে এটি খুব দরকারি একটি গবেষণা। এ গবেষণায় প্রজাতিগুলোকে নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি বিলুপ্তির স্থান ও কতটা দ্রুত তারা বিলুপ্ত হয়েছে, তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য উঠে এসেছে।’
গবেষণার তথ্যমতে, এই বিলুপ্তির অধিকাংশই ঘটেছে দ্বীপাঞ্চল ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। এ দুটি অঞ্চলই বড় বড় গাছের আবাস। বিশেষত কাঠ হয়, এমন গাছের সংখ্যা এসব অঞ্চলেই বেশি। আবার বৈচিত্র্যের দিক থেকেও এ দুই অঞ্চলই এগিয়ে রয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, এই বিলুপ্তির পেছনে মানুষ অনেকাংশে দায়ী। প্রাকৃতিকভাবে প্রজাতি বিলুপ্তির গতি শুধু মানুষের উপস্থিতির কারণেই বেড়ে গেছে ৫০০ গুণ। উদাহরণ হিসেবে বলছেন, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি থেকে চন্দনগাছ হারিয়ে গেছে শুধু প্রসাধনকাজে অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে।
তাদের মতে, এমনকি বিলুপ্ত উদ্ভিদের যে সংখ্যা উঠে এসেছে, তাও বর্তমান বিলুপ্তির গতি বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, বর্তমানে মানুষের প্রকৃতি-ধ্বংসী কাজ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে। তবে আশার কথাও আছে। এমন অনেক প্রজাতিরই সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বিলুপ্ত বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
গত ৩০০ বছরে পৃথিবীর মোট বনের ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২৯টি দেশ তাদের বনের ৯০ শতাংশ হারিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রধান সাতটি পণ্য তৈরিতে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি বন উজাড় হয়েছে।
পূর্বের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, গত আড়াই শ’ বছরের পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছ। এ সংখ্যা একই সময়ে বিলুপ্ত পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপের মিলিত সংখ্যার দ্বিগুণ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণ ধারণার চেয়ে ৫০০ গুণ দ্রুতগতিতে গাছ বিলুপ্তির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে মনোযোগ পাচ্ছে না। একটি শতকে বিলুপ্ত হওয়া পশুপাখির সম্পর্কে হয়তো মানুষ মোটাদাগে একটি ধারণা রাখে। কিন্তু গাছের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে না। অনেকেই বলতে পারবে না, কোন গাছটি এখন আর দেখা যায় না।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ