শেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের লিফট নষ্ট থাকায় সিঁড়িতেই এক প্রসূতির সন্তান প্রসবের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বৃষ্টির পানিতে ৪ দিন যাবৎ হাসপাতালটির লিফট নষ্ট। ঠিক করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে লিফট নষ্ট থাকায় ৯ তলা এ ভবনে উঠা-নামা করতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়ছেন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। এমনকি চিকিৎসক, নার্সরাও রয়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
এর মধ্যেই শনিবার দুপুরের দিকে সদর উপজেলার গাজীরখামারের সুফিয়া বেগম নামের এক আসন্ন প্রসবা নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর লিফট বন্ধ থাকায় সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ তলার গাইনি ওয়ার্ডে যাওয়ার সময় প্রথম তলার সিঁড়িতেই বাচ্চা প্রসব করেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের লিফট না থাকায় ওই প্রসূতির স্বজন ও সেবা নিতে আসা মানুষজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নার্স বলেন, ৮ তলার হাসপাতালে সিড়ি বেয়ে উঠা খুবই ভোগান্তির ব্যাপার। সুস্থ মানুষের পক্ষেই এত উপরে উঠানামা করা দুরূহ। আর রোগীর জন্য বিষয়টা কতটা কষ্টসাধ্য তা বুঝতে বেশি বুদ্ধির দরকার নেই।
সিঁড়িতে বাচ্চা প্রসবের প্রসঙ্গে সদর হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার আরএমও খায়রুল কবির সুমন জানিয়েছেন, হুইল চেয়ার থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে নেয়ার সময় ওই নারী বাচ্চা প্রসব করেন। সেখানে থাকা চিকিৎসক ও নার্সরা নবজাতক ও মাকে সেবা দিয়ে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে। এখন মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে সুস্থতার দোহাই দিয়ে দায় এড়াতে পারবে না কর্তৃপক্ষ। একটি হাসপাতালের লিফট চারদিন ধরে বন্ধ থাকা অস্বাভাবিক ঘটনা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং লিফটের সাথে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাসপাতালগুলোতে এমন হাজারও বিড়ম্বনায় নিয়মিত পড়তে হবে রোগীদের।
জানা যায়, ৯তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালজুড়ে রয়েছে করোনা ইউনিট, জরুরি ভর্তি রোগীর শয্যা, ডাক্তার চেম্বার, অপারেশন থিয়েটারসহ অতি প্রয়োজনীয় সেবা দানের বিভিন্ন বিভাগ।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ৭ জানুয়ারি লিফট ও ওই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ ২৪ আগস্ট থেকে লিফট দুটি বিকল হয়ে আছে। এতে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে করোনা আক্রান্ত, প্রসূতি নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।
এদিকে, সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জেলা হাসপাতালের নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু হয়। এই আট মাসের মধ্যে দুটি লিফটই অন্তত চারবার নষ্ট হয়েছে।
রাবেয়া বেগম নামে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমি মহিলা মানুষ। পাঁচ তলায় আমায় নাতি ভর্তি। বাপুরে অতো উপরে সিড়ি বাইয়ে উঠা খুব মুশকিল। আর পারতেছি না। আমি হাই পেশারের রোগী। সেখানে উঠানামা করতে গেলে আমার জান বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়।’
রিপন মিয়া নামে এক রোগী বলেন, এত বড় হাসপাতালে শুধুমাত্র দুইটি লিফট দেয়া ঠিক হয়নি। যন্ত্র নষ্ট হতেই পারে। এতো প্রয়োজনীয় একটি জিনিস ঠিক করতে দিনের পর দিন লেগে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এত দরকারি জিনিস সারাই করতে ১০-১৫ ঘণ্টা সময়ের বেশি লাগা উচিত না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃষ্টির পানিতে চার দিন ধরে লিফট নষ্ট। মেরামত করতে গণপূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুর রউফ বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লিফট দুটি বন্ধ রয়েছে। লিফট চালু করতে ইতিমধ্যে জেলার গণপূর্ত বিভাগকে অবগত করা হয়েছে। গণপূর্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এদিকে ড্যাফোডিল কোম্পানির অংশীদার কামরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের লিফট আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে নূরানী কনস্ট্রাকশন। এর কোনো দায়বদ্ধতা আমাদের নেই। সমস্যা হলে আমাদের জানালে, আমরা যেয়ে ঠিক করে দিই। লোকবলের অভাবে ইঞ্জিনিয়ার পাঠাতে পারিনি। দ্রুতই পাঠানোর চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে শেরপুর গণপূর্তের নির্বার্হী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান জানান, লিফটে পানি ঢুকলে লিফট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অবগত করা হয়েছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৫৩২
আপনার মতামত জানানঃ