মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। এবার এই আইনের ব্যবহার হচ্ছে সরকারের প্রতিপক্ষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির একজন স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির দায়ে শেরপুরের বিএনপি নেতা মজিবর রহমানকে আটোক করেছে পুলিশ।
জানা যায়, আটক মজিবর রহমান ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করায় ২২ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার পোড়াগাঁও এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য প্রদান এবং তা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওইদিন সকালে পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সংক্ষিপ্ত সভার আয়োজন করে তারা। এ সময় প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অরুচিকর ও অশালীন বক্তব্য প্রদান করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান চৌধুরী।ওই বক্তব্য মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধারণ করে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করেন।
মজিবর বিপদে পড়েন ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হলে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ তাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা তৈরি হলে পুলিশ মঙ্গলবার বারোমারীর পোড়াগাঁও নিজ এলাকা থেকে তাকে আটক করে।
অবশ্য ইউনিয়ন বিএনপি’র ওই নেতার পক্ষে দাঁড়াননি তারই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। তিনি জানান, এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া নিয়ে আমার সাথে তর্ক লেগে যাওয়ায় সেদিন আমি অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে আসি। এমনকি উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নুরুল আমীনও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অমন বক্তব্য ওই শালীনতা বিবর্জিত স্বীকার করে জানান, বিষয়টি জানার পর ১৬ ডিসেম্বর রাতেই তাকে বারণ করে বক্তব্য প্রত্যাহার করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে নিতে বলি। কিন্তু সে কারও কথা রাখেনি।
বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নালিতাবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল। তবে এর সঙ্গে আরও লোকজনকে জড়ানোর ইঙ্গিত মেলে তার কথায়। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মুঠোফোনে কলের খরচ বাড়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে লিখেছিল ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর। পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়ে সে আরেকটি পোস্ট দিলেও তার ক্ষমা মেলেনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্থানীয় যুবলীগ নেতার করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই কিশোর এখন গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি।
বাংলাদেশের বেসরকারি অধিকারভিত্তিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশই বর্তমান সরকার প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মানবাধিকারের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। বিরোধীপক্ষের রাজনীতিকদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষায় এ আইনের অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের।
এসডাব্লিউ/ডিআর/এসকেএইচ/আরা/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ