আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরতেই তালিবানরা তান্ডব দেখাতে শুরু করে। আর এখন তো আফগানিস্তান দখল করে রীতিমত গদিতে জাঁকিয়ে বসেছে তালিবান। যার ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত এখন কাঠগড়ায়। আর এর জেরে একধাক্কায় অনেকটা কমে গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা। তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা আর গ্রহণযোগ্যতা একদমই কমেনি বরং বেড়েছে।
তবে নিজের ভুল শুধরাতে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপও নিচ্ছেন বাইডেন। সম্প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি প্রতিশ্রুত সময়ের পরেও প্রয়োজন হলে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে অবস্থান করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
জনপ্রিয়তা কমেছে বাইডেনের
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম বাইডেনের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। গত সপ্তাহে করা সমীক্ষায় ৭ শতাংশ কমে গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাপ্রুভাল রেটিং। এই মুহূর্তে ৪৬ শতাংশ মার্কিনী মনে করছেন যে বাইডেন দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য। এতোদিন ৫৩ শতাংশ মার্কিনী মনে করছিলেন বাইডেন দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য।
যদিও নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বহু আমেরিকানই মনে করছেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সব গুণ কমলা হ্যারিসের মধ্যে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমলেও, হ্যারিস আছে মানুষের পছন্দের তালিকায়।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের অ্যাপ্রুভাল রেটিং বেড়ে হয়েছে ৪৩ শতাংশ। এই ৪৩ শতাংশ মানুষ মনে করেছে আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমলার। যদিও, এখনও ৪৭ শতাংশ আমেরিকাবাসী মনে করছেন দেশ চালানোর কোনও যোগ্যতাই হ্যারিসের নেই।
আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থার জন্য অনেকেই আমেরিকাকে দায়ী করছেন। প্রশ্ন উঠছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিদেশনীতি নিয়েও। প্রায় দু’দশক ধরে আফগানভূমে থাকার পর হঠাৎ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত, ২০ বছরেও তালিবান সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করা, এত দীর্ঘ সময়েও আফগান সেনাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না দেওয়া, এমন নানাবিধ অভিযোগ আমেরিকার বিরুদ্ধে।
অনেকে আবার আফগানিস্তানে তালিবানি উত্থানের পিছনে মার্কিন ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও তুলে ধরেছেন। সেকারণেই তলানিতে বাইডেনের জনপ্রিয়তা। তবে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির দায় নিতে নারাজ বাইডেন।
এ ব্যাপারে বাইডেন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু বন্দুকের মুখে নারীদের অধিকার রক্ষা করা যায় না। আফগানদের দেখভাল এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তালিবানদেরই নিতে হবে।
আফগানিস্তানে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ
জো বাইডেন প্রশাসন তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানে অস্ত্র বিক্রির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে। তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের তিন দিন পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমেরিকান অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বাইডেন সাফ জানিয়েছেন আপাতত যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অস্ত্র বিক্রি করা যাবেনা কোনমতেই।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ক প্রতিনিধিরা বলেছেন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে আপাতত আফগানিস্তানে কোনও রকম অস্ত্র পাঠানো যাবে না। পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী শান্তির উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে আরও প্রসারিত করার জন্য এ জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী দিনে এই বিষয়ে আর তথ্য দেওয়া হবে বলেও জানান হয়েছে।
একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে আশরাফ ঘানির আফগানিস্তান পতনের সময় তালিবানরা কোটি কোটি মার্কিন অস্ত্র নিজেদের দখলে নিয়েছিল। শুধু অস্ত্র নয়, সামরিক গাড়ি ও সেনা বাহিনীর পোষাকও তালিবানরা দখল করে নিয়েছিল।
তালিবানরা যেসব মার্কিন অস্ত্র দখল করেছিল সেগুলি হল ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, এ-টুয়েন্টি নাইন সুপার টুকানো আক্রমণকারী বিমান, খনি প্রতিরোধী হামভি, আমেরিকার তৈরি এম-ফোর কার্বাইন আর এম-সিক্সটিন রাইফেল। অন্য একটি তথ্য বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সাল পর্যন্ত ২২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে।
মার্কিন সেনা থাকবে আফগানিস্তানে
ইতিমধ্যেই কাবুল বিমানবন্দর দখল করেছেন মার্কিন সৈন্যরা। বাইডেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে আগস্টের পরেও আফগান ভূমিতেই থাকবেন মার্কিন সেনারা।
এ প্রসঙ্গে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের যে চূড়ান্ত সময়সীমা তিনি নির্ধারণ করেছিলেন তার পরেও আমেরিকান সৈন্যদের সেদেশে থাকতে হতে পারে। যেহেতু সশস্ত্র তালিবান যোদ্ধারা দেশ ছাড়তে মরিয়া মানুষদের কাবুল বিমানবন্দরে পৌঁছতে বাধা দিচ্ছে।
কাবুলে কারযাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাময়িক নিয়ন্ত্রণ এখন প্রায় সাড়ে চার হাজার আমেরিকান সৈন্যর হাতে। তবে বিমানবন্দরের চারপাশ ঘিরে রেখেছে তালিবানের তল্লাশি চৌকি এবং সেখানে টহল দিচ্ছে তালিবান যোদ্ধারা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ