সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (স্যোশাল মিডিয়া) ওপর আরও নজরদারি বাড়াতে দেশে আসছে নতুন আইন। দেশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন ডেটা সুরক্ষার নিশ্চিয়তা দেওয়াই এই আইনের লক্ষ্য জানানো হলেও; বিতর্ক তৈরি হচ্ছে এর অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই এই আইন আবার গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞদের এই চিন্তার পেছনে কাজ করছে আমাদের নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা। ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের (২০১৩ সালে সংশোধিত) বিতর্কিত ৫৭ ধারার চেয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে আরও বেশি বিতর্কিত, এটি যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রণীত এবং আরও বিপজ্জনক ও ঢালাওভাবে ব্যবহার করার মতো একটি আইন, সেটি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তাই নতুন আইন বা আইনের সংশোধন যে দেশের মানুষের জন্য খুব একটা মঙ্গলজনক হয় না, তা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এটি আমাদের গুজব ছড়ানো এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
সূত্র মতে, এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া বিল (আইন) তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জানা যায়, এই আইনে দেশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন ডেটা সুরক্ষার নিশ্চিয়তা দেওয়া হবে। তবে বিশেষজ্ঞ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের আশঙ্কা, এতে সুরক্ষার সুবিধা কম থাকবে; বরং ব্যবহারকারীর ডেটায় হস্তক্ষেপের বিষয়টিই থাকবে বেশি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক খসড়া আইনের আইন তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটি আমাদের গুজব ছড়ানো এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের তথ্য দেশের ভেতরেই থাকবে তা নিশ্চিত করতেই এ নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। আইসিটি বিভাগ এটি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, নতুন ডেটা সুরক্ষা আইনে বিদেশি ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে জাতীয়ভাবে ডেটা সেন্টার তৈরি করতে এবং ব্যবহারকারীর ডেটা দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করতে বলা হবে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের কোনও আইন নেই। এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য করা।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন ট্র্যাকারের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫টি দেশের মধ্যে একটি যেখানে তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা বিষয়ক কোনও আইন নেই। তাই বিশেষজ্ঞরা এ ধরণের আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন। তবে তারা আশঙ্কা করছেন খসড়া আইনে মূল বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ প্রধান সামাজিক আন্দোলন রাস্তায় নামার আগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেই শুরু হয়েছিল। আর এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই যে নতুন তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত।
তবে আইনটির অব্যবহারের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যেহেতু বর্তমানে অফলাইনে ভিন্নমত পোষণ করার ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই মানুষ এখন ইন্টারনেট প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। এই আইনের ফলে মত প্রকাশের সেই জায়গাটুকুও আর থাকবে না বলে মনে করছেন তারা।
নতুন এ আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে ডেটা লোকালাইজেশন, অর্থাৎ বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি দ্বারা সংগৃহীত নাগরিকদের তথ্য জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
তবে আইনটির অব্যবহারের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যেহেতু বর্তমানে অফলাইনে ভিন্নমত পোষণ করার ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই মানুষ এখন ইন্টারনেট প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। এই আইনের ফলে মত প্রকাশের সেই জায়গাটুকুও আর থাকবে না বলে মনে করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কিছু ঘটনা দেখেছি, যেগুলো বেশ আলোচিত ঘটনা। বিশিষ্টজনের ব্যক্তিগত কথোপকথন প্রকাশ্যে এসেছিল। এগুলো কোনও বেসরকারি সংস্থা ফাঁস করেছে বলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আর এটা বিশ্বাস না করার পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে।
তারা বলেন, অবশ্যই, জাতীয় নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে প্রায়শই এগুলোকে পক্ষপাতমূলক স্বার্থের জন্য পুঁজি করা হয়। আমরা যা চাই তা হল এমন একটি আইন যা রাজ্যের কাছ থেকেও এই গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।
তাদের মতে, সরকার যা করার চেষ্টা করছে সেটিকে ডেটা লোকালাইজেশন বলা হয়। আর ডেটা লোকালাইজেশন মানে হল যে ফিজিক্যাল ডিভাইসটিতে একজন ব্যক্তির ডেটা থাকে, তা সেই ব্যক্তির রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে থাকতে হবে।
এটা মূলত একটি দ্বিমুখী তলোয়ার। আইনটি হওয়া উচিত যেকারও কাছ থেকে ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষার জন্য। এমনকি রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকেও। কিন্তু এখানে একটা ফাঁদ রাখা হচ্ছে সচেতনভাবেই। যেকোনও ব্যক্তিগত তথ্যে সরকারের অবাধ বিচরণ, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬৫৬
আপনার মতামত জানানঃ