আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের ওপর তালিবান হামলা চালাচ্ছে, ঘরে ঘরে তল্লাশি করছে। তালিবানের ভয়ে কয়েকজন সাংবাদিক জীবন বাঁচাতে লুকিয়ে আছে। এমন তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর এ অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বলেছে, আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের ওপর তালিবান যে হামলা চালাচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে এবং সাংবাদিকদের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে আফগানিস্তানে কাজ করেন এমন চার সাংবাদিকের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছেন তালিবানের সদস্যরা। যে চার সাংবাদিকের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন জার্মানির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক। তালিবানের হাত থেকে বাঁচতে তারা লুকিয়ে রয়েছেন।
এদিকে আফগানিস্তানের নানগাহার প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের সময় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে তালিবান। সিপিজে বলেছে, এই ঘটনার তদন্ত করছে তারা।
সিপিজের এশিয়াবিষয়ক সমন্বয়ক স্টিভেন বাটলার বলেন, আফগানিস্তানের জনসাধারণের সঠিক তথ্য জানা দরকার। এ জন্য গণমাধ্যমকে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালিবান। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের বাড়িতে বাড়িতে যে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যে হামলার ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করতে হবে। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া মুক্তভাবে সাংবাদিকদের কাজ করতে দিতে হবে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আফগান সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে এমন দাবি জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সংগঠনটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে আফগান সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আরো কাজ করতে হবে।
দেশটির নিয়ন্ত্রণ তালিবানদের হাতে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের জরুরি ভিসা দেওয়া ও নিরাপদে সেখান থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিজে। তালিবানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন এমন শত শত স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
দেশটির নিয়ন্ত্রণ তালিবানদের হাতে চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের জরুরি ভিসা দেওয়া ও নিরাপদে সেখান থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিজে। তালিবানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন এমন শত শত স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
সিপিজে’র নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সাইমন বলেন, আফগান সাংবাদিকদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্ব আছে। তারা সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের জন্য বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের উচিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বিপদগ্রস্ত আফগান সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো।’
সাইমন আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানে কী হচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে হলে এককালের সুসংহত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাসনে থেকে হলেও সংবাদ সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরি কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
‘আফগান সাংবাদিকদের স্থানীয় জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই’, বলেন তিনি।
সিপিজে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা সাংবাদিকদের জন্য জরুরি ভিসার স্বপক্ষে কাজ করে আসছে। নতুন করে আসা কোনো ঝুঁকিতে সাময়িক কিংবা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্যই মূলত তারা এটি নিয়ে কাজ করছে।
নিরাপদ স্থানে যেতে ইচ্ছুক প্রায় ৩০০ সাংবাদিকের নিবন্ধন ও তাদের আবেদনের সত্যায়ন করেছে সিপিজে। আরও শত শত আবেদনের নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া চলছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাতে গোণা কিছু সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্র অথবা তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশ্যে (যেখানে তাদের ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হবে) ছেড়ে যাওয়া উড়োজাহাজে উঠতে পেরেছেন। ঝুঁকিতে থাকা বেশিরভাগ সাংবাদিক আত্মগোপনে আছেন।
এ পর্যন্ত তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকিতে থাকা ৪৫ জন সাংবাদিকদের নিবন্ধন ও সত্যায়নের কাজ করেছে সিপিজে। তাদের অনেকেই নারী সাংবাদিক, যারা নারীদের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন লেখার কারণে অধিক পরিমাণ ঝুঁকিতে আছেন। সিপিজে ১২৭ জন আফগান গণমাধ্যম সদস্য, যারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঝুঁকিতে আছেন এবং মার্কিন সংবাদ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত আরও ১১৯ জন সাংবাদিকের নিবন্ধন ও সত্যায়ন করেছে। তবে, সিপিজে’র তালিকায় সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত নন। তাদেরকেও সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। গত দুইদিনে সিপিজে আরও ৪৭৫টি ই-মেইলের মাধ্যমে সহায়তার অনুরোধ পেয়েছে, যেগুলো নিরীক্ষণ করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে সিপিজে আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জরুরি সহায়তা ও আফগান সাংবাদিকদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কাজটিতে গতি বাড়িয়েছে। এসব সাংবাদিকদের সব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে এবং আরও অন্যান্য দেশের সরকার সাংবাদিকদের সরিয়ে নেওয়া ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সিপিজে জানায়, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে কর্মরত আফগান সাংবাদিকরা এখনো দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি। সংবাদমাধ্যমগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠিয়েছে, যেখানে তারা সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী যারা মার্কিন অভিযানে সাহায্য করেছেন, তাদেরকে দ্রুত ও নিরাপদে দেশটি থেকে বের করে আনার জন্য আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
সিপিজে’র গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০১ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আফগানিস্তানে প্রায় ৫৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে গত এক বছরেই পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। এ বছরের শুরু থেকেই আফগান সাংবাদিকরা সিপিজে’র কাছে সাহায্য চাইছেন এবং এ সংখ্যাটি ক্রমশ বাড়তেই থাকে, বিশেষ করে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের সময় এগিয়ে আসা এবং দেশটির বেশিরভাগ অংশে তালিবানের দখল প্রতিষ্ঠার কারণে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৯
আপনার মতামত জানানঃ