দেশের জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পরই সোমবার মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ’র বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। দেশটির বিজ্ঞান মন্ত্রী খয়েরি জামালউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রী খয়েরি নিজের ইনস্টগ্রামে এক বার্তায় জানান, প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিনকে জাতীয় প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন মুহিউদ্দিন।
তবে মুহিউদ্দিনের কার্যালয়ের কাছে বার্তা সংস্থা রয়র্টাস বিষয়টি জানতে চাইলে তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।
মাত্র ১৮ মাস পরই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন। মালয়েশিয়ার রাজা আল সুলতান আব্দুল্লাহর বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র পেশ করবেন বলে রোববারই নিশ্চিত করেন দেশটির মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মোহদ রেদজুয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ।
মোহদ রেদজুয়ান আরও জানান, মন্ত্রিসভার সদস্য ও নিজের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন।
দেশটির ইতিহাসের স্বল্প সময়ের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ জমা দিলেন তিনি। মুহিউদ্দিন পদত্যাগে পরবর্তী সরকার কে গঠন করবেন, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কারণ, কোনও আইনপ্রণেতারই পার্লামেন্টে সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আবার করোনা মহামারির মধ্যে মালয়েশিয়ায় নতুন করে নির্বাচন হবে কি না, তাও পরিষ্কার নয়। তবে মালয়েশিয়ায় পরবর্তী দায়িত্ব কে পতে যাচ্ছেন, তা নির্ভর করছে দেশটির রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর।
মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা, মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনর্গঠনে সঠিক নির্দেশনা দিতে না পারা এবং অযৌক্তিকভাবে রাজাকে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে। মালয়েশিয়ায় ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন মুহিউদ্দিন। তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে সম্প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষ।
২০২০ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট দেওয়ান রাকাইয়েতের সদস্যদের ভোটে জিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছিলেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। তবে তার পক্ষে ও বিপক্ষে পড়া ভোটের ব্যবধান অল্প থাকায় নিজের পদ ধরে রাখতে সারাক্ষণ চাপে ছিলেন তিনি।
মুহিউদ্দিন পদত্যাগে পরবর্তী সরকার কে গঠন করবেন, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কারণ, কোনও আইনপ্রণেতারই পার্লামেন্টে সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আবার করোনা মহামারির মধ্যে মালয়েশিয়ায় নতুন করে নির্বাচন হবে কি না, তাও পরিষ্কার নয়। তবে মালয়েশিয়ায় পরবর্তী দায়িত্ব কে পতে যাচ্ছেন, তা নির্ভর করছে দেশটির রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর।
সম্প্রতি সেই চাপ আরও বেড়ে যায় তার দলের কয়েকজন আইনপ্রণেতা বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অন্যতম শরিক ও মালয়েশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেওয়ার পর।
এ ছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা, মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনর্গঠনে সঠিক নির্দেশনা দিতে না পারা এবং অযৌক্তিকভাবে রাজাকে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে।
জুলাইয়ের শেষে তার পদত্যাগের দাবিতে মালয়েশিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়, এর জেরে গত ৪ আগস্ট এক টেলিভিশন ভাষণে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ঘোষণা করেন, পার্লামেন্টের সদস্যরা তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত কিনা, যাচাই করতে আগামী সেপ্টেম্বরে দেওয়ান রাকাইতে আস্থাভোট চান তিনি।
সেই ভাষণে মুহিউদ্দিন বলেছিলেন— ‘সম্প্রতি আমার প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ নিয়ে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং এ সম্পর্কে আমি সচেতন। এ কারণে আমি মহামান্য রাজাকে বলেছি— উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সংবিধান ও আইনি প্রক্রিয়া মেনে দেওয়ান রাকইয়াতে আস্থাভোট হওয়া প্রয়োজন।’
‘আগামী সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্ট সেশন শুরু হলে এই আস্থাভোটের আয়োজন হবে। এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং আমি তা গ্রহণ করছি। কারণ দেওয়ান রাকইয়াতের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা আমার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।’
কিন্তু গত শুক্রবার এক পার্লামেন্ট অধিবেশনে মুহিউদ্দিন প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। পাশাপাশি আইনপ্রণেতাদের তিনি প্রস্তাব দেন— আগামী সেপ্টেম্বরে আস্থাভোটে তাকে সমর্থন দেওয়া হলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে যেসব প্রতিশ্রুতি তিনি ইতিপূর্বে দিয়েছিলেন, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তার ওই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ