টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে তিস্তার আশেপাশের এলাকা। ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদী রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালাসহ শতাধিক বাড়ি ঘর। ভেঙে গেছে মূল সড়কের ৪০ মিটার।
অবিরাম বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি রংপুরের গঙ্গাচড়া পয়েন্টে বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার রাতে প্রবল স্রোতে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের সাউদপাড়ায় তিস্তা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার অংশের ব্লক পিচিং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
তিস্তার ডান তীর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়ায় ওই এলাকার সাউদপাড়া ইসলামিয়া বহুমুখী আলিম মাদ্রাসা, সাউদপাড়া পোস্ট অফিসসহ প্রায় শতাধিক বাড়িঘর যেকোনও সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় আশঙ্কায় এলাকাবাসী তাদের মালামাল অনত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো এলাকাজুড়ে।
অপরদিকে, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চর থেকে লালমনিরহাটের তুষভান্ডার যাওয়া পাকা সড়কের ৫০ মিটার ভেঙে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
সাউদপাড়া ইসলামিয়া বহুমুখী আলিম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক এবং ওই এলাকার বাসিন্দা আসাদুল হক আনসারী জানান, শুক্রবার রাতে ডান তীর রক্ষা বাঁধের মার্জিনাল ডাইকের ব্লক পিচিংয়ের প্রায় ৫০ মিটার ধসে যায়। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে মাদ্রাসাসহ আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। একই কথা জানান ওই এলাকার বাসিন্দা হাফিজুল, মইনুল, রাশেদুজ্জামান, আলিফউদ্দিনসহ অনেকেই। তারা বলেন, ‘ভাঙন আতঙ্কে তারা রাত জেগে বসে থাকছেন। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে এক হাজার জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩শ’ ব্যাগ ধসে যাওয়া ব্লক পিচিং অংশে ফেলা হয়েছে। বাকি জিও ব্যাগ দ্রুত ফেলা সম্ভব হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে।’ একই ভাবে বিনবিনা-তুষভান্ডার সড়কেও জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে কুড়িগ্রামে মেগা প্রকল্পের নামে তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে জরুরি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষুব্ধ তিস্তা পাড়ের মানুষ।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ এলাকার ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা বখত জামালের অশ্রুসিক্ত আর্তনাদের শেষ নেই। মাত্র এক যুগে তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে ৪ বার ভাঙনে বসতভিটেসহ প্রায় আড়াই বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। বর্তমানে নদীর তীরেই মাথা গোঁজার শেষ সম্বল জমিটুকুও পড়েছে হুমকির মুখে। এটি বিলীন হয়ে গেলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বখত জামালের আশ্রয় হবে খোলা আকাশের নিচে। সন্তানরাও থাকে তাদের পরিবার নিয়ে আলাদা।
কুড়িগ্রামে উজানে ভারতীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে পানিবৃদ্ধি এবং তীব্র স্রোতে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা, রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এবং পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাসিম বাজার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলীন হয়েছে পুকুর, ফসলি জমিসহ বাগান।
হুমকির মুখে রয়েছে ঐতিহাসিক কাসিম বাজার হাটসহ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তীব্র ভাঙনে বসতবাড়ি বিলিন হয়ে গেলেও জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি হতাশ ও ক্ষুব্ধ এলাকার ভাঙন কবলিতরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/০০২৫
আপনার মতামত জানানঃ