প্রথম লকডাউনের এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এক গবেষণায় দেখা গেছে করোনাকালে সম্পর্ক ভেঙেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি হারে। প্রতি পাঁচ জনে একজনের সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে বলে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কোভিড সংক্রান্ত সামাজিক গবেষণায় উঠে এসেছে।
প্রথম লকডাউনের এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের সম্পর্কে ভাঙন ধরার হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার মধ্যে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের ৩৫ শতাংশ অন্তত একটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাঙন ধরার কথা স্বীকার করেছেন। ওদিকে ৬০ বা তারচেয়ে বেশি বয়সীদের সম্পর্কে ভাঙন ধরার হার মাত্র ১২ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক জনগণ জানিয়েছে, গত এক বছরে বাসায় বা কর্মস্থলে অন্তত একটি সম্পর্কে পুরোপুরি ভাঙন ধরেছে তাদের। মহামারি চলাকালীন যুক্তরাজ্যের সামাজিক সম্পর্কের ওপর সবচেয়ে বড় গবেষণাটিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কোভিড সংক্রান্ত সামাজিক গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনাকালে এক চতুর্থাংশ মানুষের পতি/পত্নী বা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।
এছাড়া এক চতুর্থাংশ মানুষ জানিয়েছেন, এ সময়ে অফিসের সহকর্মীদের সাথেও সম্পর্কে টানাপোড়ন শুরু হয়েছে তাদের। ২২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জানিয়েছেন, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা প্রতিবেশীদের মধ্যকার একজনের সাথে তাদের সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে।
এই গবেষণায় শুধু খারাপ সংবাদই উঠে আসেনি। প্রায় অর্ধেক (৪৬ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ জানিয়েছেন, গত এক বছরে সঙ্গীর সাথে তাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। অন্য বয়সসীমার জনগণের তুলনায় যা অনেক বেশি। সহধর্মীদের সাথে তাদের সম্পর্ক পূর্বের তুলনায় ভালো হওয়ার হার ৩০-৫০ বছর বয়সী এবং ৬০-ঊর্ধ্বদের মধ্যে যথাক্রমে ২৭ ও ২১ শতাংশ।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. এলিস পল বলেন, প্রতিবেদনে ‘কোভিড -১৯ মহামারির মিশ্র প্রভাব’ উঠে এসেছে। বাসায় বা দূরবর্তী জায়গায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে উপকৃত হয়েছেন অল্পবয়স্করা। এই সময়ে তারা জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন বলেই হয়তো তাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে, মহামারি এবং লকডাউনের চাপে মানুষকে তাদের বাড়ির বাইরের লোকজনের সাথে দেখা করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। সম্পর্কের ভাঙ্গনে এই ব্যাপারটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।’
পল আরও বলেন, বয়স্করা এই ব্যাপারে কম প্রভাবিত হয়েছে, কারণ তাদের ‘চাকরি হারানো বা আর্থিক টানাপোড়নের চাপ কম নিতে হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালে তরুণদের সামাজিক ও রোমান্টিক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। চাকরি হারানো, আর্থিক সংকট এবং লকডাউনের সময় বাসার বাইরের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে না পারাটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল মাধ্যমে বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় সরাসরি আলাপচারিতা, মতবিনিময় এবং যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। এতে নানান নেতিবাচক চিন্তাধারণা সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে। অবক্ষয় হচ্ছে সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধের। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্য ও সম্পর্ক। ভেঙে যাচ্ছে অনেকের সাজানো গোছানো সুখের সংসারও।
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের অন্যপাশে থাকা ব্যক্তি ভার্চুয়াল পর্দার আড়ালে থাকায় তার দেওয়া চমকপ্রদ তথ্য অনেক সময়েই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর এমন ফাঁদের অন্যতম টার্গেট হচ্ছেন নারীরা। ফলে অনেকের সংসারেই লেগেছে ‘ডিজিটাল আগুন’।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৮
আপনার মতামত জানানঃ