কুমিল্লার হোমনায় তিতাস উপজেলা শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মৌসুমী আক্তারসহ ছিনতাইকারী চক্রের চার নারী সদস্যকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা শেষে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় একই দিনে তিতাস উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল-আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দল থেকে মৌসুমীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— তিতাস উপজেলা শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মৌসুমী (২৫), জেলার দাউদকান্দি উপজেলার পুরান গৌরীপুর গ্রামের রাজা মিয়ার স্ত্রী আঁখি সরকার (২০), তিতাস উপজেলার আলীরগাঁও গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী হাছিনা আক্তার (২৬) ও একই উপজেলার বৈদ্যেরকান্দি গ্রামের নাছিরের স্ত্রী শিউলী (২০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার (৯ আগস্ট) হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামের মো. মনু মিয়া তার মেয়ে শারমিনকে নিয়ে দুই লাখ ১২ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংক হোমনা শাখায় জমা দিতে আসেন। ব্যাংকে ভিড় থাকায় জমা না দিয়ে তিনি বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন। পথে হোমনা বাজারের মেঘনা হাসপাতালের সামনে টাকাসহ মেয়েকে দাঁড় করিয়ে অটোরিকশা আনতে যান মনু মিয়া। এসময় মৌসুমীসহ নারী ছিনতাই চক্রের সদস্যরা কৌশলে ব্যাগ থেকে টাকা ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করেন।
এসময় শারমিনের চিৎকারে উপস্থিত লোকজন তিন নারী ছিনতাইকারীকে আটক করে। কৌশলে মৌসুমী পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা আটকদের বলেন, টাকা ফেরত দিলেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এমন প্রলোভন পেয়ে তিতাস উপজেলা শ্রমিক লীগ নেত্রী ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পরে চার নারী ছিনতাইকারীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মামলা শেষে বিকেল ৩টার দিকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কায়েস আকন্দ জানান, একটি ছিনতাইকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করে আসছিল। এদের মধ্যে চারজন স্থানীয় জনতার হাতে ধরা পড়েছেন। তাদের কাছ থেকে মনু মিয়ার এক লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মনু মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে শ্রমিক লীগ নেত্রী মৌসুমীসহ চার নারীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য মৌসুমী, তার সহযোগী হাছিনা আক্তার, আঁখি সরকার ও শিউলীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিতাস উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর কারণে মৌসুমিকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড করে কেউ রক্ষা পাবে না।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের যে পণ্যের চাহিদা বেশি, মুনাফা বেশি এবং ধান্ধা করা সবচেয়ে সুবিধাজনক, সে পণ্যটির ছড়াছড়ি হওয়াটা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ তেমনি একটি পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে কেবলি যে আওয়ামী লীগানরা সুবিধা নিচ্ছে, ধান্ধা করছে তা নয়। দীর্ঘ এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের যে আদর্শ তাতে শাণ দিতে পারেনি উল্টো আদর্শের জলাঞ্জলি দিয়ে নেমেছে ব্যবসায়ে, ধান্ধায়।
তারা বলেন, আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই দাবি করা হয়ে থাকে যে দেশে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু কী কারণে বাড়ছে এর খবর দিতে পারেন যারা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে মূলত নিজেদের আখেরে গোছাতে গিয়ে দেশে অরাজকতা তৈরী করছেন, বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। আর এসবের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
আরও বলেন, সব সময়ে সরকারি দল মানেই ক্ষমতার অপব্যবহার, একটি স্বাধীন দেশে এটা চলতে দেয়া যায় না। করোনাভাইরাস, সড়ক দুর্ঘটনা, দুর্নীতির মহামারীর পাশাপাশি ক্ষমতা অপব্যবহারের মহামারীতে সরকারি দল ভিন্ন সকলেই নির্বিচারে আক্রান্ত। ক্ষমতা অপব্যবহারের মহামারী থেকে বাঁচার জন্য গণমানুষ কোন হাসপাতালে ভর্তি হবে?
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০২
আপনার মতামত জানানঃ