বোরো মৌসুমে ধানের ফলনের কমতি নেই , তবে চালের দাম আকাশ ছোঁয়া। যে দামে আগে চিকন চাল পাওয়া যেতো সেই দাম এখন মোটা চালেরই। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরা লকডাউনে হারিয়েছে কর্ম, কারও কারও কমেছে বেতন, এমন অবস্থায় দরিদ্রের জন্য এই দামে চাল কিনে খাওয়া অসম্ভবই প্রায়। মূলত মিলারদের হাত দিয়েই চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর কথা থাকলেও অগ্রগতি নেই প্রশাসনের।
গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা। দাম বেড়ে চলতি সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। চলতি সপ্তাহে আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬৫ টাকা কেজিতে। যা আগের সপ্তাহে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ভালোমানের ২৮ চাল ও নিম্নমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা কেজিতে।
একইভাবে মাঝারি ধরনের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা কেজি। আর ভালোমানের চিকন নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে। এছাড়াও পাইজাম আতপ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি দামে। এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
মিলারদের কাছ থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে চালের দাম
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদার ও মিলারদের কাছে থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলাররা বলছেন, ধানের দাম হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।
তবে কৃষিবিদদের দাবি, এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কেনার পরও এখন মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। আর এই অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ধান রয়েছে মিলারদের কাছে। মিলাররাই যোগসাজশে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা, যা গত কয়েক বছরেও হয়নি। চালের দাম এখন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের সক্ষমতার বাইরে। তার প্রমাণ হচ্ছে- টিসিবির ওপেন মার্কেট সেলের বিক্রয় কেন্দ্রগুলো।
তিনি আরও বলেন, এই বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে মানুষের লাইন। আয় কমে যাওয়া সরকারকে মানুষের পাশে থাকতে হবে। খোলা বাজারে কম দামে আরও বেশি চাল বিক্রি করতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীদের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়।
সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩০ টাকা কেজি চাল দিচ্ছে টিসিবি। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে বেসরকারিভাবে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তদন্ত করার কথা থাকলেও তা আগায়নি
দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও চালের দাম কেন বাড়ছে তা খতিয়ে দেখতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছিলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ বোরো ধান সংগ্রহ নিশ্চিত করে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
মিল মালিকদের কাছ থেকে চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে বেরো সংগ্রহ করতে খাদ্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যথায় মিল মালিকদের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত মাসে দেয়া এমন বক্তব্যের পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলেই চলতি মাসেও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে চালের।
ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির দৃশ্য
রামপুরা বাজারে চাল কিনতে আসা মুবিনুল ইসলাম ঐ জাতীয় দৈনিককে বলেন, লকডাউনের কারণে এখন সবাই বাড়িতে থাকেন। তাই চাল আগের চেয়ে অনেক বেশি লাগে। তার ওপর দাম বাড়ছে। আল্লাহই জানেন এই অবস্থায় কতদিন চলবো।
একজন ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দিন আনি, দিন খাই। আবার হিলি করোনার জন্য কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। কামাই ধান্দা একেবারেই নেই, তার ওপর আবার চালের দাম
এমনিতেই ভোক্তারা করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত। চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় মিলারদের এমন দিনে দুপুরে দাম বাড়িয়ে দেয়া নিয়ে প্রশাসনের শাস্তিমূলক নজর না থাকাকে ভালো চোখে দেখার উপায় নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩৪৮
আপনার মতামত জানানঃ