আবারও সমস্ত মতবিরোধ পিছনে ফেলে একসঙ্গে রাজনীতির মাঠে নামলেন মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে হেভিওয়েট সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিম। পার্লামেন্ট বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে এবং প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পদত্যাগ দাবিতে আজ সোমবার রাজপথে নেমেছেন তারা। যোগ দিয়েছেন বিরোধীদের বিক্ষোভে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সোমবার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিরোধী আইনপ্রণেতারা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে মিছিল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান দেওয়া হয় ‘স্টেপ ডাউন, মুহিউদ্দিন’ (মুহিউদ্দিন, পদত্যাগ করুন)।
পার্লামেন্টের চূড়ান্ত অধিবেশন সোমবার হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত করার কথা উল্লেখ করে তা স্থগিত করেন মুহিউদ্দিন; কিন্তু বিরোধীরা বলেছে, তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা আটকাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, এদিন পার্লামেন্টের ২৯২ এমপির মধ্যে ১০৭ জন বিক্ষোভে অংশ নেন। মাহাথির-আনোয়ারের নেতৃত্বে তারা পার্লামেন্ট ভবন ঘোরাওয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু দাঙ্গা পুলিশের বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিক্ষোভকারীরা।
মিছিলের কয়েক ঘণ্টা আগেই নিরাপত্তা ব্যাপক জোরদার করা হয়। পার্লামেন্ট অভিমুখী রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে এমপিরা পার্লামেন্ট ভবনের অনতিদূরে মারদেকা স্কয়ারে সভা করেন। বক্তব্য দেন মাহাথির ও আনোয়ার।
আইনপ্রণেতাদের ফিরিয়ে দেওয়ার পর এক বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুহিউদ্দিনের আজ পতন হয়েছে।”
তিনি বলেন, সংবিধান ও রাজার ডিক্রির বিরুদ্ধে যাওয়ায় ও আইনপ্রণেতাদের তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ায় বিরোধীদলীয় ১০৭ জন আইনপ্রণেতার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছে।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “শুধু এপথেই দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটতে পারে এবং ১৭ মাস আগে থেকে চলা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক সংকটগুলো সমাধানে পূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের দিকে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে।”
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, বিরোধী এমপিদের পদযাত্রা ঠেকাতে পার্লামেন্টের বাইরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে মালয়েশিয়া। এমনকি পার্লামেন্টে ঢুকতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। করোনার কারণে গত জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। তখন পার্লামেন্ট অধিবেশনও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। তবে গত সপ্তাহে পার্লামেন্টের ‘বিশেষ অধিবেশন’ শুরু হয়।
মালয়েশিয়ায় কঠোর লকডাউন থাকা সত্ত্বেও গত কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন এবং তার মন্ত্রিসভা বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে।
পার্লামেন্টের বিশেষ এ অধিবেশন সোমবার পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের ভেতরে বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তা বাতিল করে দেওয়া হয়।
এরপরই বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম এবং দুবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ কয়েক ডজন এমপি কুয়ালালামপুরের মারদেকা স্কয়ারে জড়ো হন। এ সময় তারা মহিউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জানান। তখন তারা এখান থেকে পার্লামেন্টের দিকে পদযাত্রা করতে চান। ওই এলাকা থেকে পার্লামেন্টের দূরত্ব ২ কিলোমিটার।
করোনা মোকাবিলায় চলতি বছরের শুরু থেকেই কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে মালয়েশিয়া। এর পরও দেশটিতে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এমতাবস্থায় দেশটিতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে নয় হাজারের বেশি মানুষের।
লকডাউন ঘোষণার পরও সরকারের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে মালয়েশিয়ায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে নতুন করে করোনার বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এর আওতায় নিষিদ্ধ করা হয় জনসমাগম। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার প্রথম বিক্ষোভ হয়। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেয়।
বিক্ষোভকারীরা মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে কালো পতাকা ওড়ায়। পতাকাগুলোতে লেখা ছিল, ‘ব্যর্থ সরকার।’ এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন তার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
গত বছর মাহাথির অপ্রত্যাশিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ২০২০ সালের মার্চে ক্ষমতায় আসেন মুহিউদ্দিন; তখন থেকেই মালয়েশিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ক্ষমতাসীন নড়বড়ে রাজনৈতিক জোটের নেতা হিসেবে মুহিউদ্দিন পালার্মেন্টে সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখে ক্ষমতায় টিকে আছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১১০
আপনার মতামত জানানঃ