ইরাকে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা গ্রিন জোনে মার্কিন দূতাবাসের কাছে দুই দফা রকেট হামলা হয়েছে। ইরাকের একটি নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ওই হামলায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকালে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে।
দেশটির জ্যেষ্ঠ একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে রাজধানী বাগদাদের পূর্বাঞ্চলের শিয়া অধ্যুষিত একটি এলাকা থেকে ওই রকেট ছোড়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মার্কিন দূতাবাস লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ার আলামত পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
ইরাকের ওই সূত্র বলছে, একটি রকেট গ্রিন জোনের ভেতরে পার্কিং লটে এবং দ্বিতীয়টি পাশের একটি উন্মুক্ত স্থানে আঘাত হেনেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়া এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক এবং সৈন্যরা তিনবার রকেট এবং ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। এর মধ্যে ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের একটি ঘাঁটিতে অন্তত ১৪টি রকেট আঘাত হানে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই সৈন্য আহত হন।
মার্কিন সৈন্য এবং স্থাপনা লক্ষ্য করে সিরিয়া এবং ইরাকে সম্প্রতি হামলা বৃদ্ধি পেলেও বৃহস্পতিবারের হামলার ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কেউই দায় স্বীকার করেনি। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারাই এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে সফর শেষে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পরই এই হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার (২৬ জুলাই) হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল কাধিমি। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথমবার ওয়াশিংটনে সফর করলেন তিনি। তার এই সফরের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেয়া।
তার উদ্দেশ্য বেশ সফল হয়েছে বলা চলে। কারণ তার সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইরাকে মার্কিন বাহিনী তাদের যুদ্ধের মিশন শেষ করবে। কাধিমি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরও হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই ইরাকে মার্কিন অবস্থান লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব হামলার জন্য ইরানপন্থি বিভিন্ন সংগঠনকে দায়ী করা হচ্ছে। ইরাকে বর্তমানে ২ হাজার ৫শ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে, যারা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অবশিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্থানীয় সেনাদের সহায়তায় ভূমিকা রাখছে।
গত বছর ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলেইমানি এবং ইরান সমর্থিত একটি শিয়া মুসলিম মিলিশিয়ার নেতা মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ইরাকে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়। ইরান সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ইরাক থেকে মার্কিন জোটের সব বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানায়। ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে ইরাকের। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে বাইডেন বলেছেন, ইরাক থেকে চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মিশন শেষে করে সেনারা দেশে ফেরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের মধ্যে সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। মার্কিন বাহিনী তাদের মিশন শেষ করলেও ইরাকি বাহিনীকে আত্মরক্ষার কাজে প্রশিক্ষণ, উপদেশ ও পরামর্শ দেয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘ইরাকে আমাদের ভূমিকা থাকবে প্রশিক্ষণ, সহায়তা এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করা। কিন্তু চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমরা আমাদের যুদ্ধের মিশন শেষ করতে যাচ্ছি।’
বাগদাদের গ্রিন জোনে বিশ্বের বিভ্ন্নি দেশের দূতাবাস এবং সরকারি ভবন রয়েছে। প্রায়ই অধিক সুরক্ষাবেষ্টিত এই এলাকা রকেট হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব হামলার পেছনে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো জড়িত
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২০৫
আপনার মতামত জানানঃ