বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের জন্য অভিবাসীরা নিজ দেশ ছেড়ে উন্নত দেশের উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অভিবাসীদের অন্যতম পছন্দসই গন্তব্য। প্রতি বছর লাখ লাখ অভিবাসী ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন তুলনামূলকভাবে কম বৈধতা পাওয়া শুরু করেছে।
গতবছর ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রায় ১১ হাজার ২৬৯ জন বাংলাদেশি অভিবাসী আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) আবেদন করেন। এর মধ্যে মাত্র ৩৭৪ জনের শরণার্থী হিসেবে আবেদন গ্রহণযোগ্য হয় এবং ৮৭ জনকে সাবসিডিয়ারি প্রটেকশনের আওতায় আবেদন গ্রহণ করেন। সর্বমোট ৯ হাজার ২৩৯ জন বাংলাদেশি আশ্রয় আবেদনকারীকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়; বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার ৩২টি আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গতবছর ইউরোপে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩০০ জন অভিবাসী আশ্রয় আবেদন করেন। যদিও তা গত ২০১৯ সালের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম। এদের বেশিরভাগই সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইরাক এবং পাকিস্তানের নাগরিক। এশিয়া সাবকন্টিনেন্টে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে ভারত এবং নেপালের অবস্থান। উক্ত আবেদনের ৩২ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর করা হয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশিদের প্রায় ৯৭ শতাংশ আবেদনই প্রত্যাখ্যান হচ্ছে।
গত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশীদের আশ্রয় আবেদনের অনুমোদনের হার প্রতিনিয়তই হ্রাস পাচ্ছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আশ্রয় আবেদনের দিক থেকে প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে থাকলেও পাকিস্তানের আশ্রয়ে আবেদন বাংলাদেশ থেকে দ্বিগুণ বৈধতা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ কমসংখ্যক আবেদন করার পরেও বাংলাদেশের থেকে অনেক বেশি আশ্রয় আবেদনের প্রেক্ষিতে বৈধতা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশি নাগরিকরা ইউরোপের প্রধানত ফ্রান্স, গ্রীস, ইতালি এবং সাইপ্রাসে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় আবেদন করেছেন। বাংলাদেশীদের পছন্দের তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ফ্রান্স। এরপর গ্রিস এবং ইতালি। কেননা বাংলাদেশি মোট আশ্রয় আবেদনকারীর প্রায় ৪৬ শতাংশই ফ্রান্সে আবেদন করেছেন।
অপরদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ইউরোপের তিনটির দেশে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয় আবেদন করা হয়- জার্মানি, ফ্রান্স স্পেন, গ্রিসে এবং ইতালি। বলতে গেলে ৭০% শরণার্থী এ কয়টি দেশে আবেদন করেন। সাধারণত ইউরোপের শরণার্থী রুট হিসেবে এই দেশগুলো সন্নিকটে হওয়ায় এবং আইওএম কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে থাকার জন্য আরেকটি কারণ।
২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নতুন ৩ লাখ ৮১ হাজার ১৫ জন শরণার্থী ইউরোপে আশ্রয় আবেদন করেছেন এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে সর্বমোট ৮ লাখ ৮২ হাজারটি আবেদন প্রসেসিং পর্যায়ে অপেক্ষমাণ রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের আবেদনের পরিমাণ খুবই কম। বাংলাদেশের সাবকন্টিনেন্টের পাকিস্তান আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে, সবচেয়ে বেশি শরণার্থী আশ্রয় আবেদনের শীর্ষে রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া এবং পাকিস্তান এই দেশগুলো থেকে শরণার্থী আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ইউরোপের আবেদনকারী সর্বমোট আবেদনের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ইরাক, তুর্কি, সোমালিয়া, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া রয়েছে।
বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন তুলনামূলকভাবে কম বৈধতা পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বেশিরভাগ আবেদনকারী অর্থনৈতিক কারণে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিচ্ছেন। আশ্রয় আবেদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার ভুল তথ্য উপস্থাপন করছেন যেগুলো সরেজমিন তদন্তে উপস্থাপিত বিষয়গুলো ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ বিপ্লবের কারণ খুব সহজেই বিষয়গুলো নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে এবং বর্তমান বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের কার্যক্রমের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় সহজে উঠে আসছে এবং তার ইউরোপে অবস্থিত বাংলাদেশি সঠিক ক্ষতিগ্রস্ত শরণার্থী নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ