বিরল এক ঘটনার মুখোমুখি উত্তর ইউরোপের দেশ নরওয়ে। রবিবার স্থানীয় সময় রাত প্রায় একটার দিকে অন্তত পাঁচ সেকেন্ড ধরে বায়ুমন্ডলে উল্কা জ্বলতে দেখা যায়। রাতের আকাশে উজ্জ্বল করে দেখতে পাওয়া এই উল্কার আলোয় হতবাক হয়ে পড়েছে নরওয়ের বাসিন্দারা।
একদিকে এই উল্কাপাত অন্যদিকে বন্যা। প্রকৃতি যেন ইউরোপকে নিয়ে আশ্চর্য এক খেলায় মেতেছে। ইউরোপে সম্প্রতি সময়ের বন্যায় এ পর্যন্ত ২০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জার্মানিতে মারা গেছে ১৭৩ জন, বেলজিয়ামে মারা গেছে ৩২ জন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ১৫৮ জন।
সূত্র মতে, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল। এ অঞ্চলে বন্যার কারণে জরুরি সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বন্যার পানির তোড়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ধসে গেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে, গাড়ি ভেসে গেছে।
এদিকে, উল্কাপাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় শক্তিশালী আলোর ঝলকানি দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রবিবার এই ঝলকানির সঙ্গে সঙ্গে একটি জোরালো শব্দও শোনা যায়।
দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি জরুরি কল পেলেও কোনও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে ওই উল্কাপিণ্ডের খোঁজে নেমে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা ধারণা করছেন, রাজধানী অসলোর কাছেই কোনো বনের মধ্যে আঘাত হেনেছে উল্কাপিণ্ডটি।
সাধারণত এ ধরনের উল্কাপিণ্ড মহাকাশ থেকে দ্রুতগতিতে ছুটে এসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
নরওয়েজিয়ান মেটিওর নেটওয়ার্ক বলছে, ওই আগুনের গোলকটি স্থানীয় সময় শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে আবির্ভূত হওয়ার পর কমপক্ষে পাঁচ সেকেন্ড দৃশ্যমান ছিল। সেকেন্ডে ১৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন (ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৫০০ মাইল) ওই উল্কাপিণ্ডটিকে দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বিশাল এলাকা থেকেই দেখা গেছে।
নরওয়েজিয়ান মেটিওর নেটওয়ার্কের কর্মকর্তা মর্টেন বিলেট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, উল্কাপিণ্ডটি যেহেতু মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে ভ্রমণ করছিল, তাই এটি অবশ্যই সৌরজগতের গ্রহাণু বেল্টকে ছুঁয়ে এসেছে। উল্কাপাতের এ ঘটনাকে বিপজ্জনক না বলে তিনি একে ‘ভৌতিক ঘটনা’ বলে আখ্যায়িত করেন।
নরওয়ের জ্যোতির্বিদ ভেগার্ড রেক্কা বিবিসিকে বলেন, রাতের ওই সময় তার স্ত্রী জেগেই ছিলেন। তিনি বাতাসে কাঁপনের শব্দ শুনতে পান। এরপর বড় এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন। সেই বিস্ফোরণ যেন বাড়ির পাশেই ঘটেছে বলে মনে হয়।
সূত্র মতে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬.৩ কিলোমিটার গতিতে ছুটে আসা উল্কাটিকে নরওয়ের দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ জুড়েই দেখা যায়।
দেশটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেগার্ড রেকা জানিয়েছেন ওই সময়ে তার স্ত্রী জেগে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের আগে বাতাসে কিছু একটা কাঙপতে দেখেন তার স্ত্রী।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেগার্ড রেকা জানিয়েছেন, ক্যাম্পিংয়ে থাকা একটি গ্রুপ জানিয়েছে, তাদের প্রায় মাথার উপরে বড় বিস্ফোরণ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে উল্কাপিন্ডটির ওজন প্রায় দশ কেজি। এটা খুব বেশি বড় না হলেও বহু মানুষ এটি দেখতে পাওয়ার ঘটনা বেশ বিরল।
উল্কাপিণ্ডটি যেখানে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে একদল বিশেষজ্ঞ পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অসলো থেকে ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে ফিনেমারকা নামের বনভূমি এলাকায় ওই উল্কাপিণ্ডটি আঘাত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উল্কাপিণ্ডটির ওজন ১০ কেজি হতে পারে।
উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার ঘটনা বেশ বিরল। তবে এর একটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে পারে। ২০১৩ সালে রাশিয়ার উরাল পার্বত্য এলাকায় একটি উল্কাপিন্ড পড়লে প্রায় ১ হাজার ছয়শ’ মানুষ আহত হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ