ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওযায় ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষসহ বড় পদের কর্মকর্তারাও। এই আইন বাতিলের দাবি নিয়ে সভা সমাবেশ আন্দোলন হলেও কোনো ফলাফল আসেনি।
এরই ধারাবাহিকতায় মদ ও দুধ-সম্পর্কিত বহুল প্রচলিত একটি কৌতুক ফেসবুকে শেয়ার করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনেছেন বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদের সম্পাদক ও নেতা অমিত ভৌমিক। শনিবার শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। থানার পুলিশ এটিকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠিয়েছে।
বিষয়টি গনমাধ্যমকে নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিটের মতামত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অভিযোগপত্রে অমিত ভৌমিক উল্লেখ করেন, হাফিজুর রহমান কার্জন সনাতন ধর্মের ভগবানকে হেয়প্রতিপন্ন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন, যা সারা বিশ্বে কোটি কোটি সনাতনী ধর্মীয় অনুভূতিতে ব্যাপক আঘাতের শামিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, ধর্মীয় উগ্রবাদ সৃষ্টি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার মানসেই হাফিজুর রহমান কার্জন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতমূলক কুরুচিপূর্ণ এ পোস্ট করেছেন। অভিযোগপত্রে সেই পোস্টটির স্ক্রিনশটও সংযুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাবি অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন৷ গনমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া উচিত না। আমার পোস্টে যদি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
এই অধ্যাপক বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি সেই পোস্টটি আমার ফেসবুক থেকে ডিলেট করে দিয়েছি। সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছি।’
হাফিজুর রহমান কার্জনের মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন মনে করেছেন অভিযোগকারী অমিত ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘ভগবান তো একজনই। তিনি হিন্দু ধর্মকে আঘাত করে পোস্টটি দিলেও আমি মনে করি তিনি সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। উনি যতই মাফ চাক বা পোস্টটি উঠিয়ে নিক, ওনার আসলে মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।’
অমিত ভৌমিক বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন অধ্যাপক যদি এ রকম কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখে সেটি আসলে দেশ এবং দেশের বাইরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’
এদিকে আবেদনে অ্যাডভকেট সুমন কুমার রায় উল্লেখ করেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই স্বনামধন্য ও বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপিঠের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে শান্তি, শৃঙ্খলা, ঐক্যতাসহ সুন্দর দেশ ও জাতি গঠনে অবিলম্বে অভিযুক্ত শেখ হাফিজুর রহমানের পদত্যাগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনার সদয় মর্জি হয়।
শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, ইউরোপের বেশকিছু দেশেও ব্লাসফেমি আইনে মামলা হওয়ার নজির রয়েছে। ডেনমার্কে কোরান পুরানোর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করায় ২০১৭ সালে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইনে অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া ইসলাম বিষয়ে একটি ব্লগ পোস্টে অবমাননাকর মন্তব্য করায় ২০০৯ সালে ফিনল্যান্ডে এক ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়। জার্মানিতে ‘কোরান,পবিত্র কোরান’ লেখা টয়লেট পেপার বিলি করায় ২০০৬ সালে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
এই জার্মানিতেই ২০১৬ সালে গাড়িতে খ্রিস্টান বিরোধী স্টিকার লাগানোর দায়ে এক ব্যক্তিকে ৫০০ ইউরো জরিমানা করা হয়। এছাড়া, আয়ারল্যান্ড টিভি অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ কমেডিয়ান স্টিফেন ফ্রাই’য়ের মন্তব্যের কারণে অভিযোগ আনা হলে তদন্ত চলে তাঁর বিরুদ্ধে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২১০৯
আপনার মতামত জানানঃ