জেরুজালেমে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ আল-আকসায় বহুবার বহুভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে দখলদার ইহুদিবাদীরা। তবে এবার আল-আকসা নিয়ে রাতারাতি সুর পাল্টে ফেললেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। এর কারণ দলে আরব-মুসলিম শরিক দল রাম পার্টির প্রভাব।
ইহুদিবাদী দেশটির কট্টরপন্থি দুই এমপিসহ চার শতাধিক ইহুদি গত রোববার জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদ আল-আকসায় সেনা পাহারায় ঢুকে পড়ার ঘটনায় সেদিন কট্টরপন্থি ইহুদিদের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত বলেছিলেন, আল-আকসায় ইহুদিদেরও প্রার্থনা করার অধিকার আছে।
কিন্তু দেশটির বর্তমান জোট সরকারের আরব ইসরায়েলি শরিক দল এ ব্যপারে কঠোর নিন্দা জানানোর একদিন পরই সুর পাল্টে ফেলেন নাফতালি বেনেত।
এবার আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে, জোট সরকারের আরেক শরিক কট্টর ডানপন্থি ইয়ামিনা পার্টির নেতারা চান, ইহুদিদেরও মুসলিমদের মতো আল-আকসায় ঢুকে প্রার্থনা করার অনুমোতি দেওয়া হোক।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এই কট্টরপন্থি ইয়ামিনা পার্টিরই নেতা। প্রথমে উগ্রপন্থি এ দলের নেতাদের প্ররোচণায় আল-আকসায় ইহুদিদের আগ্রাসন সমর্থন করলেও আরেক আরব-মুসলিম শরিক দল রাম পার্টির চাপে শেষ পর্যন্ত আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন নাফতালি বেনেত।
ইসরায়েলি সরকারে প্রথম মুসলিম শরিক দল রাম দল এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে হলেও আল-আকসার পবিত্রতা রক্ষা করবো। ইসলামিক এ দলের হুমকিতেই কট্টরপন্থি ইহুদিরা চুপসে যায়।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় রোববার সকালে চারশর বেশি কট্টর ইহুদিবাদী ইসরায়েলি সেনাদের সহযোগিতায় মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করে। এ সময় উত্তেজনা দেখা দিলে ইসরায়েলি বাহিনী এক ফিলিস্তিনিকে ব্যাপক মারধরের পর তাকে আটক করে।
এরপর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো মসজিদুল আকসায় হামলার পরিণতির বিষয়ে হুশিয়ারি দেয়। একই সঙ্গে হামলা ঠেকাতে ফিলিস্তিনিদের প্রস্তুত থাকতে বলে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ধৈর্যের পরীক্ষা না নিতেও দখলদার ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায় হামাস।
এর মধ্যেই মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ চত্বরেও দখলদার ইহুদিদের সহিংস আগ্রাসন উপেক্ষা করে কমপক্ষে ২০ হাজার ফিলিস্তিনি পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা আল আকসা আগ্রাসন চালানোর ব্যাপারে তেল আবিবকে সতর্ক করেছে।
মঙ্গলবার আল আকসার জেরুজালেম আল-কুদস শহরের পুরনো অংশে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের আগের দিন সোমবারই ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে মসজিদ চত্বরে হাজার হাজার মুসলিম প্রবেশ করেন।
আরব ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, গত রোববারও দখলদার ইহুদি নিরাপত্তা বাহিনী মসজিদ চত্বরে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বেধড়ক মারপিট করে আহত করে।
ঈদের আগে দখলদারদের এমন সহিংস আগ্রাসনের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনে এসব আগ্রাসনের জেরে নতুন করে সংঘাত হলে তার দায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলকেই নিতে হবে।
ঈদের আগে নিরীহ ফিলিস্তিন মুসলিমদের উপর সহিংস হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইরান, তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তান, জর্দানসহ বেশকিছু মুসলিম দেশ।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে রোজায় ইসরায়েলি সেনারা আল-আকসা মসজিদে আগ্রাসন-হামলা চালালে গাজা উপত্যকায় দখলদারদের অভিমুখে রকেটবৃষ্টি চালিয়ে কঠোর জবাব দেয় হামাসসহ অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলো।
পরে এক সপ্তাহের বেশি রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ