
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে দিনকে দিন। উন্নতির এই পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে মানুষের ব্যবহারও কমে আসছে ক্রমশ। আর তারই ধারাবাহিকতায় এবার ভারতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘটনায় ব্যবহার করা হলো রোবট।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নারকেল তেল এবং স্যানিটাইজার তৈরির কারখানার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে রোবট নামানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১ টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মহেশতলা থানা এলাকার মুখার্জি গেট সংলগ্ন পালান ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় বিভিন্ন সংস্থার কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে একাধিক রাসায়নিক কারখানাও রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ মজুদ রয়েছে কারখানাগুলোতে। পাখা তৈরির কারখানা, নারকেল তেলের কারখানাও রয়েছে।
জানা যায়, পরপর দু’টি রাসায়নিকের ড্রামে বিস্ফোরণ হাওয়ায় আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে যায় গোটা কারখানা। গোটা এলাকায় কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দমকলের ৬টি ইঞ্জিন উপস্থিত হয়েছে।
এলাকায় জলাশয় না থাকার কারণে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে দমকল কর্মীদের। ঘটনার জেরে এখনও পর্যন্ত ৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে লাগা এ আগুন আয়ত্তে আনার দীর্ঘ চেষ্টা চালায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর নামানো হয় রোবট। প্রবল ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কারখানাটির পাঁচ কর্মী। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবশেষে আগুন আয়ত্তে আনতে নামানো হয়েছে রোবটও।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফোম ব্যবহার করেছেন দমকলকর্মীরা। প্রচণ্ড আগুনের তাপে তপ্ত হয়ে রয়েছে কারখানাটির দেওয়াল। তা যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আগুন নেভাতে রোবটের ব্যবহারের নির্দেশ দেন তিনি।
সুজিত বলেন, মহেশতলা শিল্পতালুকে সকাল ১১টা নাগাদ আগুন লাগে। স্যানিটাইজারের গুদাম বলে আগুন বাড়ে। পাশে থাকা একটি নারকেল তেলের কারখানাতেও আগুন ছড়ায়।
আগুন আয়ত্তে আনতে ফোম ব্যবহার করা হচ্ছে। রোবটও আনা হচ্ছে। কারখানায় কেউ আটকে পড়েননি বলে জানান তিনি। একজন সামান্য জখম হয়েছিলেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১১টার কিছু আগে স্যানিটাইজার তৈরির কারখানায় আগুন লেগে যায়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে স্যানিটাইজারের ড্রামে। তা থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশা থাকা একটি নারকেল তেলের কারখানায়।
ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের অন্যান্য কারখানার কর্মীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় যে কারখানাটিতে আগুন লেগেছে, সেখানে স্যানিটাইজার তৈরীর কাজ হয়। এদিন বেলার দিকে প্রথমে ওই কারখানার মধ্যে থাকা রাসায়নিক ভর্তি দু’টি ড্রামে পর পর প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ হয়।
তারপর কারখানার মধ্যে বিপুল পরিমাণে রসায়নিক মজুদ থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা কারখানাটি। কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা এলাকা।
সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা খবর দেন দমকল ও থানায়। ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন দমকলকর্মীরা। তবে ওই এলাকায় কোনও জালাশয় না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় দমকলকর্মীদের। তবে কী কারণে আগুন লাগল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, দেশটির মহারাষ্ট্রের একটি রাসায়নিক কারখানার স্যানিটাইজার প্রস্তুতকরণ ইউনিটে আগুন লেগে অন্তত ১৪ জন মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরো অনেকে।
গতকাল সোমবার মহারাষ্ট্রের কারখানাটিতে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালায় স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট।
পুনের এসভিএস অ্যাকুয়া টেকনোলজিসের একটি প্ল্যান্টে গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে এ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি গাড়ি সেখানে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।
স্থানীয় দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সময় কারখানাটির ভেতর অন্তত ৩৭ জন কর্মী ছিলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর থেকে তাদের অন্তত ১৭ জন কর্মী নিখোঁজ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে স্যানিটাইজার কারখানা থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে দেখা গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিজেএ/২৩৫৫
আপনার মতামত জানানঃ