জেরুজালেমে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ আল-আকসায় আবারও আগ্রাসন চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদ থেকে ফের মুসলমানদের বের করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। এসময় তারা মুসল্লিদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী ৪০০ ইহুদিকে জোরপূর্বক আল-হারাম আল-শরীফে প্রবেশ করায়। খবর আলজাজিরা ও ফিলিস্তিন বার্তা সংস্থা ওয়াফার।
এ সময় উত্তেজনা দেখা দিলে ইসরায়েলি বাহিনী এক ফিলিস্তিনিকে ব্যাপক মারধরের পর তাকে আটক করে।
এদিকে আল-আকসা মসজিদে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনের এ অংশটি দেশটির পশ্চিম তীর শাসন করছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলছে, সেনাদের এই আগ্রাসনের পুরোটা দায় নিতে হবে ইসরায়েল সরকারকে। একই সঙ্গে আল-হারাম আল-শরীফে ইহুদিদের জোরপূর্বক প্রবেশকে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবেও দেখছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। যদিও ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি হামলার আগে কয়েকজন ফিলিস্তিনি যুবক তাদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছিল।
এদিকে, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো মসজিদুল আকসায় হামলার পরিণতির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। একইসঙ্গে হামলা ঠেকাতে ফিলিস্তিনিদেরকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এক বিবৃতিতে পশ্চিম তীর ও দখলদার ইসরায়েলের ভেতরে বসবাসকারী সব ফিলিস্তিনিকে আগামীকাল সোমবার আরাফা দিবস পর্যন্ত মসজিদুল আকসার দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে হামাস গাজার প্রতিরোধ সংগ্রামীদেরকে তাদের আঙুল অস্ত্রের ট্রিগারে রাখতে বলেছে যাতে দখলদার ইসরায়েল বুঝতে পারে মসজিদুল আকসা রক্ষায় ফিলিস্তিনিরা সদাপ্রস্তুত রয়েছে এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরণের ছাড় দেওয়া হবে না।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ধৈর্যের পরীক্ষা না নিতেও দখলদার ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের চরমপন্থী কয়েকটি গোষ্ঠী রোববার মসজিদুল আকসায় ঢুকতে ইহুদি উপশহরবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। এছাড়া বায়তুল মুকাদ্দাসের পুরোনো দেওয়ালের চারপাশে মিছিল করতেও ইহুদিবাদীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একটি উগ্র দখলদার সংগঠন।
সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পর মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। খৃষ্টপূর্ব ১০০৪ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন হযরত সোলায়মান আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দুইটি বড় ও ১০টি ছোট গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিতে প্রকাশ পেয়েছে নির্মাণশৈলীর এক মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি।
বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কারে ব্যবহার করা হয় মার্বেল, স্বর্ণসহ নানা ধরণের মূল্যবান ধাতু ও পাথর। এটিকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ইউনেস্কো।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূমি অবৈধভাবে দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদিরাষ্ট্র ইসরায়েল। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে যুদ্ধে আল-আকসা মসজিদ দখল করে নেয় দেশটি। এরপর থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দখলদার বাহিনী। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আল-আকসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েল। এমনকি ১৯৬৯ সালে পবিত্র মসজিটিতে অগ্নিসংযোগও করেছিল দখলদাররা। এরপর নানা বিধিনিষেধ আর শর্ত পূরণের মাধমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা।
এরপরও কয়েকবার বিভিন্ন অজুহাতে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী আল-আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্ধ করে দেয়। ২০০৩ সালে জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল।
ইহুদিদের কাছে এই স্থানটি টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত। তাদের দাবি, এর নিচেই রয়েছে তাদের দুইটি প্রাচীন মন্দির। অন্যদিকে খ্রিস্টানরাও আল-আকসা মসজিদের স্থাপনাকে তাদের পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে।
গত ছয় মাসে ৫৪২৬ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল
২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৫৪২৬ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে বলে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি এনজিওগুলো জানিয়েছে। ওই ফিলিস্তিনি এনজিওগুলো আরো বলেছে, আটক ওই ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও আছে। সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফিলিস্তিনি বন্দীদের নিয়ে কাজ করা দ্যা কমিশন অব ডিটেইনি অ্যাফেয়ারস, দ্যা ফিলিস্তিনিয়ান প্রিজনার সোসাইটি, দ্যা আডডামির প্রিজনার সাপোর্ট, হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন ও দ্যা ওয়াদি হিলওয়েহ ইনফরমেশন সেন্টার নামের ফিলিস্তিনি এনজিওগুলো বলেছে, এ বছরের শুরু থেকে ফিলিস্তিনের ৮৫৪ শিশু ও ১০৭ নারীকে আটক করেছে ইসরায়েল।
মে মাসে সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করে ইসরায়েল। এ সময় তিন হাজার এক শ’ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী করা হয় বলে জানিয়েছে ওই এনজিওগুলো।
ফিলিস্তিনি এনজিওগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, অধিকৃত জেরুজালেম থেকে সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। মোট এক হাজার ৬৯৯ ফিলিস্তিনিকে জেরুজালেম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে বেশির ভাগ বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে থাকা আরব শহর ও জেরুজালেম থেকে আটক করা ফিলিস্তিনি বন্দীদের দ্রুত মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কতজন বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
আগের বছরের প্রথম ছয় মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যত ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে তার দ্বিগুণ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে বলে এনজিওগুলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনজিওগুলোর প্রতিবেদন মতে, ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চার হাজার ৮৫০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী অবস্থায় আছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৮
আপনার মতামত জানানঃ