অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ড পুর্ব জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে তান্ডব চালিয়েছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। সোমবার সকালে ৪৭ বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি পুলিশের ছত্রছায়ায় মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে তান্ডব চালায় বলে জেরুসালেম ইসলামিক ওয়াকফ এক বিবৃতিতে জানায়।
তারা জোর করে ওই পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করে অবৈধ কর্মকাণ্ড করে বলে জানিয়েছে একটি ফিলিস্তিনি সংস্থা। এর আগে রোববার এক শ’ ছয় ইহুদি বসতি স্থাপনকারী পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।
জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদ ও অন্যান্য পবিত্র স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা জর্ডানের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রবেশ করেছিল আল-মুগারবাহ গেট দিয়ে। ওই সময় তাদেরকে নিরাপত্তা দিচ্ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদীনার মসজিদে নববীর পরেই মুসলমানদের কাছে আল-আকসার অবস্থান। অন্যদিকে, ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে ইহুদিদের কাছে পরিচিত এই স্থানটি তাদের কাছে পবিত্র স্থান।
ইহুদিদের দাবি, প্রাচীন দুইটি ইহুদি মন্দির এর নিচে অবস্থান করছে। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ইসরায়েলি বাহিনী মসজিদুল আকসাসহ পুরো জেরুসালেম শহর দখল করে নেয়। তখন থেকেই মসজিদটি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ফিলিস্তিনের ওয়াকফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালে মোট ৩৪ হাজার ৫৬২ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস
পবিত্র আল আকসা-মসজিদ। মুসলমানদের প্রথম কেবলা। তবে জেরুজালেমের এই স্থানটিকেই নিজেদের পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে ইহুদি এবং খ্রিস্টানরাও।
১৯৬৭ সনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে। এর পূর্ব জেরুসালেমেই আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত। পরে ১৯৮০ সালে ইসরায়েল সমগ্র জেরুসালেম দখল করে নেয়। কিন্তু, ইসরায়েলের এ জেরুসালেম দখল করার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি।
যদিও এরপর থেকে মসজিদটিতে ইবাদতের জন্য, দখলদার বাহিনীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই তাকিয়ে থাকতে হয় ফিলিস্তিনের সাধারণ মুসল্লিদের।
সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর পরই, মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। খৃষ্টপূর্ব ১০০৪ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন হযরত সোলায়মান আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এরপর বিভিন্ন সময়ই এর সংস্কার করা হয়। দু’টি বড় ও ১০টি ছোট গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিতে প্রকাশ পেয়েছে নির্মাণশৈলীর এক মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি।
বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কারে ব্যবহার করা হয় মার্বেল, স্বর্ণসহ নানা ধরণের মূল্যবান ধাতু ও পাথর। ঐতিহাসিকভাবেই আল-আকসা মসজিদ মুসলমানদেরই পবিত্র স্থান। তারপরেও এটিকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ইউনেস্কো।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূমি অবৈধভাবে দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদিরাষ্ট্র ইসরায়েল। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে যুদ্ধে, আল-আকসা মসজিদ দখল করে নেয় দেশটি। এরপর থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দখলদার বাহিনী।
আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আল-আকসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েল। এমনকি ১৯৬৯ সালে পবিত্র মসজিটিতে অগ্নিসংযোগও করেছিল দখলদাররা। এরপর নানা বিধি-নিষেধ আর শর্ত পূরণের মাধমে সেখানে ইবাদতের সুযোগ পেতেন সাধারণ মুসল্লিরা।
এরপরও কয়েকবার বিভিন্ন অজুহাতে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী আল-আকসা মসজিদ ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্ধ করে দেয়। ২০০৩ সালে জেরুজালেমে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়। বিভিন্ন সময় ইহুদিরা মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মুসল্লীদের ওপর হামলা চালায়।
ইহুদিদের কাছে এই স্থানটি টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত। তাদের দাবি, এর নিচেই রয়েছে তাদের দু’টি প্রাচীন মন্দির। অন্যদিকে খ্রিস্টানরাও আল-আকসা মসজিদের স্থাপনাকে তাদের পবিত্র স্থান হিসেবে দাবি করে আসছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২২০
আপনার মতামত জানানঃ