আফগানিস্তানের কান্দাহারে তালিবানের হামলায় নিহত হয়েছেন ভারতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রধান আলোকচিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী। দেশটির কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বলদাক জেলায় সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহের সময় তিনি নিহত হন। গত কয়েকদিন ধরেই কান্দাহার প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করছিলেন রয়টার্সের পুলিৎজার জয়ী এই ফটোসাংবাদিক।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের নিকটে কান্দাহার সীমান্তের স্পিন বলদাক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে তালিবানদের সঙ্গে লড়াই করছে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক দানিশ। সেখানে তালিবানের হামলায় আফগানিস্তানের বাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ সদস্যও নিহত হয়েছেন। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে তারা নিহত হন বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
টুইটারে এক সাংবাদিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতেই গুরুতর জখম হয়েছিলেন দানিশ। তিনি আফগান সেনা শিবিরেই ছিলেন। তাকে আহত অবস্থায় শিবিরে রেখেই আফগান সেনারা তালিবান বিরোধী অভিযানে গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সকালে ফের তালিবানের হামলার মুখে পড়ে আফগান সেনারা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দানিশের।
ওই সাংবাদিক জানিয়েছেন, দানিশের মরদেহের ছবিও এসেছে তাদের কাছে। কিন্তু তারা তা প্রকাশ করছেন না। বুধবার ওই এলাকায় পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং দখল করে নেয় তালিবানরা। এর অন্য প্রান্তে রয়েছে পাকিস্তানের চামান। পরদিন আফগান বাহিনীর তরফে জানানো হয়, স্পিন বলদাক এলাকা পুনর্দখল করা হয়েছে। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তালিবানরা। সম্প্রতি আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন দানিশ। সেখান থেকে নিয়মিত ছবি ও খবর পাঠাচ্ছিলেন।
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজে শুক্রবার জানিয়েছেন, আফগান সুরক্ষা বাহিনীর সাথে থেকে কান্দাহার প্রদেশে সংবাদসংস্থা রয়টার্সের হয়ে রিপোর্টিং এর কাজ করছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় আফগান সেনা-তালিবানদের সংঘর্ষের ছবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থানের ছবি তুলেও পাঠিয়েছেন। কান্দাহারে আফগান সেনা-তালিবানদের একটি সংঘর্ষে প্রাণ হারান ভারতীয় এই ফটো সাংবাদিক। যদিও এখনও পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে এই ঘটনা নিয়ে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।
পুলিৎজারজয়ী এই সাংবাদিকের মৃত্যুর পর রয়টার্সের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্রিডেনবার্গ ও বার্তা সংস্থাটির এডিটর ইন চিফ আলেসান্দ্রা গ্যালোনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছি। এ জন্য সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দানিশ একজন অসাধারণ সাংবাদিক ছিলেন।’ এ ছাড়া দানিশের পরিবারের প্রতি শোক জানানো হয়েছে রয়টার্সের পক্ষ থেকে।
আফগানিস্তানের বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, দানিশের ওপর তালিবানের সদস্যরা যখন হামলা চালায়, তখন তিনি এক দোকানির সঙ্গে কথা বলছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, দানিশ সিদ্দিকী ভারতের নাগরিক। গত সপ্তাহে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী ও তালিবানের সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই শুরু হলে সেখানে সংবাদ সংগ্রহের জন্য যান তিনি। সেখানে আফগানিস্তানের বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন তিনি।
রয়টার্সে ২০১০ সালে শিক্ষানবিশ ফটোসাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন দানিশ সিদ্দিকি। এর ছয় বছরের মধ্যেই ইরাকের মসুলে যুদ্ধের ছবি তুলতে যান তিনি। ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের ছবিও তোলেন তিনি।
২০১৯-২০ সালে হংকংয়ে বিক্ষোভ, ২০২০ সালে দিল্লির দাঙ্গার ছবি তুলেও প্রশংসিত হন এই ফটোসাংবাদিক। ভারতের রয়টার্সের আলোকচিত্রী দলের প্রধান ছিলেন দানিশ। তিনি ভারতের প্রথম পুলিৎজার জয়ী ফটোসাংবাদিক ছিলেন। ২০১৮ সালে সহকর্মী আদনান আবিদির সঙ্গে ফিচার ফটোগ্রাফিতে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন দানিশ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ফটোসাংবাদিকের মৃত্যুর বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। সংঘর্ষের ঘটনায় দানিশ ছাড়া আর কতজন নিহত হয়েছে সেটাও পরিষ্কার নয়। এদিকে ভারতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজাই দানিশকে নিজের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এক বন্ধুর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন তিনি।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, ৪০ বছর বয়সী দানিশ ছিলেন মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্র টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ২০১০ সালে রয়টার্সে শিক্ষানবীশ আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এর ছয় বছরের মধ্যেই যান ইরাকের মসুলে, যুদ্ধের ছবি তুলতে।
এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের অনেক ঘটনা কভার করা এ সাংবাদিকের ক্যামেরায় আফগান ও ইরাক যুদ্ধের পাশাপাশি হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলন, নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, উত্তর কোরিয়ার ম্যাস গেইমস, দিল্লির দাঙ্গা, ভারতের কোভিড পরিস্থিতি এবং সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন-যাপনও উঠে এসেছে।
রয়টার্স ছাড়াও তার এসব ছবি বিশ্বের বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রিকা, স্লাইড শো ও প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ১৭৫৩
আপনার মতামত জানানঃ