নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা দ্বিধাহীনভাবেই পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। মালালা ইউসুফজাই মাত্র ১৪ বছর বয়সে তালিবানের গুলিবিদ্ধ হয়েও লড়াই ছাড়েননি। ইতিমধ্যে বিশ্বের সম্ভ্রমও আদায় করে নিয়েছেন। পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার।
মালালাকে পাঠ্যসূচিতে রাখা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে পাকিস্তানে ঘটলো উল্টো। দেশটিতে মালালা ইউসুফজাইয়ের ছবি পাঠ্যবইয়ে ছাপানোয় সেই বই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান যুদ্ধের নায়ক আজিজ ভাট্টি শাহিদের পাশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইকে রাখায় পাঞ্জাব প্রদেশের সপ্তম গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো সোশ্যাল স্টাডিজ বিষয়ের বই বাজেয়াপ্ত করা হয়।
জানা যায়, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (ওইউপি) ওই বই ছাপায়। সোমবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ড (পিসিটিবি) এই বই জব্দ করে।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম দ্য ডনের এক খবরে বলা হয়, বইটির ৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, দেশটির জাতীয় কবি আল্লামা ইকবাল, দার্শনিক সায়েদ আহমেদ খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, কিংবদন্তি সমাজসেবী আবদুল সাত্তার ইধী, বেগম রানা লিয়াকত আলী খান, নিশান-ই-হায়দার পুরস্কারপ্রাপ্ত আজিজ ভাট্টি ও নারী আন্দোলনকর্মী মালালা ইউসুফজাইয়ের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
বইটি এরই মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিলি করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বইটি বাজেয়াপ্তের পর পিসিটিবি, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থা মিলে পাঞ্জাব শহরের বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালাচ্ছে।
গত সোমবার পিসিটিবির একদল কর্মকর্তা গুলবার্গের মিনি মার্কেটে ওইউপির অফিসে অভিযান চালান এবং সেখানে থাকা সব বইয়ের সব কপি বাজেয়াপ্ত করেন। ওই প্রতিনিধিদল গণমাধ্যমে চিঠি দিয়ে বলেছে, ওই বই প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
এর আগেও গত বছর পিসিটিবির পক্ষ থেকে ১০০ পাঠ্যবই নিষিদ্ধ করা হয়। অভিযোগ করা হয়, এসব বইয়ে ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে’ কথা ছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘অনৈতিক ও অবৈধ’ বিষয়বস্তু রাখা হয়।
এদিকে, পাকিস্তানের ‘অল পাকিস্তান প্রাইভেট স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন’ সোমবার প্রকাশ করল মালালা বিরোধী এক তথ্যচিত্র।
নোবেলজয়ী এই মালালার বিরোধিতা করেই তৈরি হল তথ্যচিত্র ‘আই অ্যাম নট মালালা’। তৈরি করল তারই দেশ পাকিস্তান। সে দেশের ‘অল পাকিস্তান প্রাইভেট স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন’ সোমবার প্রকাশ করেছে এই তথ্যচিত্র।
সেখানে মালালার ইসলাম ও বিয়ে সম্পর্কিত মতামত এবং তার পশ্চিমি ধ্যানধারণার প্রচারকে কঠোরভাবে সমালোচনা করা হয়েছে।
‘অল পাকিস্তান প্রাইভেট স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট কাশিফ মির্জা এই তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘আই অ্যাম নট মালালা’ তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আমরা দেশের পড়ুয়াদের ইসলাম, বিয়ে ও পশ্চিমি অ্যাজেন্ডার মতো বিভিন্ন বিষয়ে মালালার ধারণা সম্পর্কে জানাতে চেয়েছি।’
তিনি আরও জানান, ‘দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের সামনে আমরা মালালার মুখোশ খুলে দিতে চাই। যাতে উনি নিজের ওই তথাকথিত মহিলাদের অধিকার আদায় করার সংগ্রামের গল্প শুনিয়ে আর প্রভাবিত করতে না পারেন মানুষকে।’
প্রসঙ্গত, ভোগ পত্রিকার জুন সংখ্যায় মালালার এক সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। সেখানে এই বিষয়গুলি নিয়েই কথা বলেছিলেন তিনি।
সেখানে বিয়ে প্রসঙ্গে মালালার মতকে ‘ইসলাম বিরোধী’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন মির্জা। এভাবেই নানা সমালোচনায় তিনি বিদ্ধ করেছেন মালালাকে। মালালার নোবেল পুরস্কার পাওয়া কিংবা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে তার ছবি তোলারও নিন্দা করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৬৪৭
আপনার মতামত জানানঃ