রংপুরে হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নমুনা পরীক্ষার চাপ বেড়ে গেছে। পিসিআর ল্যাবের সক্ষমতার অভাবে পড়ে আছে প্রায় আড়াই হাজার নমুনা। ল্যাবে নমুনার জট লেগে থাকায় প্রতিবেদন না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না উপসর্গের রোগীরা। এ অবস্থায় রংপুর সিটি করপোরেশনসহ উপজেলাগুলোতে নমুনা সংগ্রহ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে, নমুনা দেওয়ার এক সপ্তাহ পরও প্রতিবেদন না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না উপসর্গের রোগীরা। বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী। গত এক সপ্তাহে করোনার উপসর্গ নিয়ে রংপুর হাসপাতাল ও বাড়িতে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা মাত্র ১৮৮টি। রংপুর সিটি করপোরেশনে ১০ লাখ মানুষের বসবাস। অথচ দিনে ৩৫টি নমুনা পরীক্ষার কোটা রয়েছে তাদের। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ও লালমনিরহাট জেলার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে। দিনে প্রত্যেক জেলার নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোটা রয়েছে। সংক্রমণ বাড়লেও জেলার কোটার বাইরে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। মূলত এজন্য নমুনার জট লেগেছে।
তিনি বলেন, ৫ জুলাই পর্যন্ত রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষের দেওয়া নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেয়েছি। গত সাত দিন ধরে জমা দেওয়া নমুনার প্রতিবেদন পাইনি। এ অবস্থায় আমরা নমুনা সংগ্রহ করছি খুবই কম। সাত দিনেও যদি নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া না যায় তাহলে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, যার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তিনি যদি করোনা পজিটিভ হন তাহলে প্রতিবেশী ও স্বজনদের আক্রান্ত করছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মারা যাচ্ছেন। এজন্য রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য আরও একটিসহ প্রতি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন জরুরি। তবে আপাতত ল্যাবে জমে থাকা নমুনা বিশেষ ব্যবস্থায় মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০-৫০০ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নমুনা পরীক্ষার কোটা মাত্র ৩৫টি। তার মধ্যে ভিআইপি, পুলিশ, বিজিবি ও সরকারি কর্মকর্তাদের নমুনা আগে পরীক্ষা করতে হয়। ২০ জন সাধারণ মানুষেরও নমুনা পরীক্ষা করা যায় না। বিশেষ কোটায় নমুনা পরীক্ষা করানোর কারণে অন্যদের নমুনা ল্যাবে থেকে যাচ্ছে। আড়াই হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় পড়ে আছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. জাকিরুল ইসলাম বলেন, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার নমুনা রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা করার সক্ষমতা কম থাকায় জট লেগেছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নমুনা সংগ্রহ কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। ফলে নমুনা জট কমে যাবে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেয়াজুল করিম বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসছেন, ভর্তি হচ্ছেন। যেহেতু তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় না, সেহেতু করোনার উপসর্গ বলা যায় না। তবে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে অক্সিজেন দিতে হয় এমন রোগীসহ অসুস্থরা মারা যাচ্ছে, তাদের করোনা আক্রান্ত বলা যায় না।
এদিকে, রংপুর বিভাগে আজ সোমবার (১২ জুলাই) সকাল ৮ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় ১ হাজার ৯৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৮ জেলায় ৬১৩ জন নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনায় মৃতদের মধ্যে রংপুরে ৫ জন, দিনাজপুরে ৬ জন, ঠাকুরগাঁয় ৩ জন, পঞ্চগড়ে ৩ জন এবং কুড়িগ্রাম জেলার ১ জন রয়েছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ৪১৯ জন। এ নিয়ে বিভাগে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মোট ৩৩ হাজার ৩২৯ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এছাড়া ৬৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৯৮৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগের রংপুরে ১১৬, দিনাজপুরে ১০৮ জন, ঠাকুরগাঁয় ১০১, পঞ্চগড়ে ৭৭, গাইবান্ধায় ৬৯ কুড়িগ্রামে ৬৮, নীলফামারীতে ৪৯ এবং লালমনিরহাট জেলায় ২৫ জন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১১ জন যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ