নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলের কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে, কারখানাগুলো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে কি না এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে কি না, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কারখানামালিকদের খতিয়ে দেখা দরকার।
রূপগঞ্জের ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক জানিয়ে শনিবার এই বিবৃতি দেয় আইএলও।
এতে বলা হয়, হাজার হাজার শ্রমিক দিনের বেশির ভাগ সময় কারখানায় কাটান। আইনকানুন মেনে ভবন নির্মাণ ও কারখানা পরিচালনা করলে অগ্নিদুর্ঘটনার মতো জরুরি মুহূর্তে শ্রমিকেরা নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ পান।
রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি আইএলও পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার, মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, রূপগঞ্জের ঘটনার পর পোশাকের বাইরের অন্যান্য কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হলে আইএলও সহযোগিতা করবে।
রূপগঞ্জের ঘটনার পর পোশাকের বাইরের অন্যান্য কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হলে আইএলও সহযোগিতা করবে।
হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর দেশের শিল্পকারখানার কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে যেসব ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণে সব পক্ষের জোর চেষ্টা থাকবে বলে বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইলের কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও গতকাল ভোর ৬টার দিকে কারখানার চারতলায় আবারও আগুন বাড়তে থাকে। নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট। তাদের চেষ্টায় ২১ ঘণ্টা পর শুক্রবার দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনে অন্তত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভবনটির প্রথম থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত তল্লাশি করে ৪৯ জনের মরদেহ পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। উদ্ধার অধিকাংশের লাশ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। নারী-পুরুষের পার্থক্যও বোঝা যাচ্ছে না। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পরপরই প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে পড়ে তিন শ্রমিক নিহত হন।
এদিকে আগুন লাগা ভবনটি নিয়ে বিস্তর অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল, ওই ভবনের চারতলায় তালাবদ্ধ থাকা ও অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র না থাকায় এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া ভবনটি কোনো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়নি এমন অভিযোগও উঠেছে স্থানীয় পর্যায়ে। কিন্তু অভিযোগগুলো সত্য নয় বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, কারখানার ব্যাপারে উঠা বেশ কিছু অসঙ্গতির অভিযোগ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন শুক্রবারই বলেছেন, ভবনে চারতলায় সিড়ির গেট তালাবদ্ধ থাকায় সেখানে আটকা প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে। আগুন নেভানোর পর তারা চারতলায় তালাবদ্ধ থাকায় ওই তলার একটি জায়গাতেই ৪৯ জনের মরদেহ পেয়েছিলেন। তাছাড়া কারখানার ভবনটি আগুন নেভানোর বা অগ্নিনির্বাপনের তেমন ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেছিলেন এই ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান এবং দায়ীদের খুঁজে বের করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং শ্রম অধিদফতরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, বহু বছরের পুরোনো বিল্ডিং কোড দিয়ে দেশ চলছে, সেটিও ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। ফলে বাড়ির মালিক থেকে শুরু করে কারখানার মালিকসহ আশপাশের মানুষ ও শহর—সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো সবার জন্যই মঙ্গলজনক।
তারা বলেন, ঢাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথমে প্ল্যান পাস হয়, পরে ভবনের স্থাপত্য নকশা পাস হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। এর ফলে ১৪ তলার ভবন ১৮ তলা হয়।
তারা বলেন, আমাদের নগরায়ণ ও শিল্পায়ন অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। দেখভাল করার কেউ নেই। ফলে ঝুঁকির মাত্রাও বাড়ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৮
আপনার মতামত জানানঃ