এবার কোভিশিল্ড নেওয়া ব্যক্তিদেরও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়তে হবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশগুলিতে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’-এর অনুমোদিত টিকার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কোভিশিল্ডের নাম। তবে এই সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে বলেই জানিয়েছেন কোভিশিল্ড টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা।
এই বিষয়ে সেরাম সিইও একটি টুইট বার্তায় লিখেন, ‘বহু ভারতীয় কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছেন, তবে এখন তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন। আমি কোভিশিল্ড নেওয়া সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে গোটা বিষয়টি আমি শীর্ষস্তরে জানিয়েছি। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই টিকা নিয়ামক সংগঠন ও কূটনৈতিক স্তরে এই সমস্যার সমাধান মিলবে।
আগামী ১ জুলাই থেকে ‘ডিজিটাল কোভিড সার্টিফিকেট’ চালু করার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই শংসাপত্র থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সব দেশে যাওয়া যাবে। তবে তার জন্য টিকা নেওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। যে চারটি টিকাকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে তার মধ্যে কোভিশিল্ড নেই। তার পরেই ভারতীয়দের অনেকে টুইটে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আপাতত চারটি করোনা টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিভাগ ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ)। সেগুলি হল – ফাইজার/বায়োএনটেকের কোমিরনাটি, মর্ডানা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাক্সজারভ্রিয়া এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের জ্যানসেন। কিন্তু অ্যাস্ট্রোজেনেকার যে টিকা ভারতে তৈরি হচ্ছে, সেটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আর এতেই তৈরি হয় সমস্যা।
দেশে একদিনে শনাক্ত ৮ হাজার ৩৬৪ জন
দেশে এক দিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরদিন রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৩৬৪ জন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০৪ জনের। আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১১৯ জনের। দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ছিল এটাই। ওই সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ২৬৮ জন।
সেখান থেকে রোগী শনাক্ত ৩ হাজারের বেশি বেড়ে ৮ হাজার ৩৬৪ জনে পৌঁছেছে। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ৭ এপ্রিলের আগের ২৪ ঘণ্টায়। সে সময় ৭ হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
দেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭৭০। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৭ হাজার ৬৭৩ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।
দেশে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি এপ্রিলের মতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে।
এবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় গত ঈদুল ফিতরের পরপরই। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েক গুণ বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯২৯
আপনার মতামত জানানঃ