সারাবিশ্বে যোদ্ধা ও আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে বাড়ছে শিশুদের ব্যবহার। গতবছর বিশ্বজুড়ে সাড়ে আট হাজারের বেশি শিশুকে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত দুই হাজার সাত’শ শিশু। আহত হয়েছে আরও পাঁচ হাজার ৭৪৮ জন।
সোমবার (২১ জুন) যুদ্ধ ও সংঘাতে শিশুদের ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
সারাবিশ্বে ১৯ হাজার ৩৭৯ শিশুর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গত বছর সোমালিয়া, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিশুরা।
জাতিসংঘের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে গতবছর আট হাজার ৫২১ জন শিশুসেনা ব্যবহার করা হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। এ সময়ে দুই হাজার ৬৭৪ জন শিশু নিহত এবং পাঁচ হাজার ৭৪৮ শিশু আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলা চালানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। একই সঙ্গে হামলার লক্ষ্যবস্তুতেও রয়েছে শিশুরা। কারণ গত বছর বসতবাড়ি, স্কুল, খেলার মাঠ ছিল বেশিরভাগ হামলায় নিশানা।
অনেক শিশু জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্তির পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধের ফলে ত্রাণকর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট। যাতে বেশি ভুক্তভোগী শিশুরা। অনেকে আক্রান্ত হয়েছে অপুষ্টি ও নানান রোগে।
এদিকে সহিংসতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বহু রোহিঙ্গা। যাদের একটা বড় অংশই শিশু, এদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মিয়ানমার, সোমালিয়া ও সিরিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রায় সাত হাজার শিশুকে।
শিশু অধিকার ক্ষুণ্ন করছে যুদ্ধরত এমন গোষ্ঠী বা সংস্থার একটি কালো তালিকাও প্রতিবেদনে রাখা হয়েছে। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতে দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টিই মূলত এই তালিকার লক্ষ্য।
যদিও অনেকদিন ধরে এই তালিকাটি নিয়ে বিতর্ক চলছিল। কারণ সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে চাপ ছিল তালিকায় যেন তাদেরকে না রাখা হয়।
ইসরায়েল কখনও এই কালো তালিকায় ছিল না। অন্যদিকে ইয়েমেন যুদ্ধে শিশুদের হতাহত করার ঘটনায় প্রথমবারের মতো নাম আসার কয়েকবছর পর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকেও ২০২০ সালের কালো তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিতর্ক এড়াতে ২০১৭ সালের গুতেরেসের প্রতিবেদনে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর দুইটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। একটি তালিকায় রাখা হয় শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া পক্ষকে, অন্যটিতে থাকে সুরক্ষা পদক্ষেপ না নেওয়া পক্ষগুলো।
সোমবার যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে উল্লেখযোগ কিছু পরিবর্তন এসেছে।
শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তালিকায় মিয়ানমার ও সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর নাম উঠে এসেছে এতে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শিশু হত্যা, তাদের পঙ্গু করা এবং যৌন সহিংসতার অভিযোগ।
আর সিরিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে শিশু সৈনিক নিয়োগ, হত্যা, পঙ্গু করা, যৌন সহিংসতার পাশাপাশি স্কুল এবং হাসপাতালে হামলার অভিযোগ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ