করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব৷ সাম্প্রতিক অতীতে সবথেকে বেশি ভয় ধরিয়েছে করোনার ভারতীয় প্রজাতি ডেল্টা৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই প্রজাতির সংক্রমণ বাড়তে দেখেই ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট থেকে ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নে বদলে গেছে ডেল্টা৷ এর মধ্যেই ভয় ধরাতে শুরু করেছে আর এক প্রজাতি ‘ল্যামডা’ (Lambda)৷
সর্বপ্রথম পেরুতে এই প্রজাতির খোঁজ মিলেছিল বলে জানা গেছে। পরে সেখান থেকেই বাকি দেশগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশ ছাড়াও বিশ্বের মোট ২৯টি দেশে নতুন ‘ল্যামডা’ প্রজাতির খোঁজ মিলেছে।
পেরুতে এপ্রিল মাস থেকে ৮১ শতাংশ করোনা সংক্রমিত এই ল্যামডা প্রজাতিতে আক্রান্ত। এদিকে গত ৬০ দিনে চিলিতে ল্যামডা প্রজাতিতে আক্রান্তের হার ৩২ শতাংশ। ব্রাজিলে গামা প্রজাতির থেকেও বেশি সংক্রামক হয়ে গিয়েছে এই নয়া ভ্যারিয়েন্ট। এছাড়া আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডোরেও এই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বেশ সংক্রামক এবং অ্যান্টিবডিকে দুর্বল করে দিতে পারে। আশঙ্কার মাঝেই নয়া এই প্রজাতি নিয়ে আতঙ্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জানা গেছে, ‘ল্যামডা’ প্রজাতির শক্তির কাছে তুচ্ছ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ সম্প্রতি এমনই তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের হাতে এসে পৌঁছেছে৷
ডেল্টা ধরনের ভীতি এখনও বিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে৷ তাই ‘ল্যামডা’ নিয়ে চুপ করে বসে থাকতে নারাজ বিজ্ঞানীরা৷ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে খোঁজ খবর৷ নতুন প্রজাতির নাড়ি নক্ষত্র জানতে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে৷ নতুন বিপদ হিসেবে ‘ল্যামডা’ ধরনকে চিহ্নিত করতে হলে আরও পড়াশোনার প্রয়োজন রয়েছেন৷ তাই এখনও ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্টেই আটকে রয়েছে ‘ল্যামডা’।
ডেল্টার মতো ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নে আসতে হলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে৷ যতদিন না পর্যন্ত প্রাণহানির কারণ হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারছে৷
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই করোনার ডেল্টা ধরনের মিউটেশনের খবর প্রকাশ হয়েছিল। ডেল্টা থেকে মিউটেট করে তৈরি হয়েছে নতুন ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট। এটি পুরোনো ডেল্টা ধরন থেকেও মারাত্মক বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জন্যে ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। শুধু ভারত নয়, যুক্তরাজ্যও এই ধরনের সংক্রমণে প্রভাবিত হয়েছে।
এরমাঝে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে ভারত, যুক্তরাজ্য ছাড়াও কানাডা, নেপাল, জার্মানি, পোল্যান্ড, জাপান, আমেরিকা, রাশিয়াতে। ডেল্টা প্লাস বা AY.1 ভ্যারিয়েন্টটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি আটকে দিতে পারে।
এদিকে বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৪০ লাখের মাইলফলক অতিক্রম করে। অন্যদিকে, বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৮২ লাখ।
রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় যে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম ২০ লাখের মৃত্যু হয়েছে এক বছরের বেশি সময়ে। কিন্তু পরবর্তী ২০ লাখের মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৬৬ দিনে।
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমন পাঁচটি দেশ হলো—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া ও মেক্সিকো। বিশ্বে করোনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার প্রায় ৫০ শতাংশ হয়েছে এই পাঁচ দেশে। তবে বিশ্বে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি পেরু, হাঙ্গেরি, বসনিয়া, চেক রিপাবলিক ও জিব্রাল্টারে।
অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃত্যুর যে সরকারি হিসাব দেওয়া হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি হবে। গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একই কথা জানায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি।
গত বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে ‘কোভিড-১৯ ’। ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ