আমেরিকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হল জো বাইডেনের। বিশ্বের দুই মহাশক্তিধর দেশের দুই শীর্ষ রাষ্ট্রনায়কের বহু প্রতীক্ষিত এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত পুতিন-বাইডেনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের। বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন দুই নেতা। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিশ্বের এই দুই শীর্ষ নেতাই জানিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে পরমাণু যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে হবে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর রাশিয়া এবং আমেরিকা দুই পক্ষই জানিয়েছে, পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই নেতা। তারা জানিয়েছেন, পরমাণু যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়, ফলে সেই যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়াই ভালো। একই সঙ্গে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দুই পক্ষের কথা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী বৈঠক করবেন এবং চুক্তি করবেন। পুটিন জানিয়েছেন, অন্তত ২০২৪ পর্যন্ত যাতে সেই চুক্তি স্থায়ী হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হবে।
কারণ গত কয়েক বছরে আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। বাইডেন প্রশাসনও রাশিয়াকে ছেড়ে কথা বলেনি। সাম্প্রতিক ন্যাটো এবং জি সেভেন সামিটেও রাশিয়াকে আক্রমণ করেছে অ্যামেরিকা। ফলে বুধবার তাদের বৈঠক আদৌ কার্যকরী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পরে দুই নেতাই জানিয়েছেন আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
বৈঠকের পর রাশিয়া এবং আমেরিকা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মাঝে মাঝে উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হলেও দুই দেশ একাধিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখবে। সেই স্টেটমেন্টেই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চুক্তির ঘোষণাও করা হয়। দুই দেশের কর্মকর্তারা বৈঠকের মাধ্যমে যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই একে অপরের প্রতি যথেষ্ট সম্মানও দেখিয়েছেন।
বৈঠকের পরে পুটিন এবং বাইডেন দুইজনেই আলাদা আলাদা সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে পুটিন সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। মানবাধিকার, নাভালনি নিয়ে সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়। নাভালনির নাম না করে তাকে একজন রাশিয়ার নাগরিক বলে সম্বোধন করেছেন পুটিন। জানিয়েছেন, নাভালনি একাধিক অন্যায় করেছেন।
রাশিয়ায় মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে না, এই প্রশ্নে পুটিন জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের তৈরি করে দেওয়া মানবাধিকার মানতে তিনি বাধ্য নন। তার দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অ্যামেরিকা মাথা গলাক তাও তিনি চান না। ক্যাপিটল হামলা থেকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার অ্যামেরিকার একাধিক ঘটনা নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন পুটিন।
বাইডেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৈঠকে কোনো পক্ষই আক্রমণাত্মক ছিল না। তবে দুইজনেই নিজেদের আপত্তির বিষয়গুলি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। বিশ্বের কথা ভেবে এবং দুই দেশের নাগরিকদের কথা ভেবে বেশ কিছু বিষয়ে তাদের যে সমঝোতা করে চলতে হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাইডেন।
পুটিনও যে বিষয়টিকে ভালো ভাবেই নিয়েছেন, তাও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভবিষ্যতে একাধিক কূটনৈতিক এবং স্ট্র্যাটেজিক বৈঠকের বিষয়েও আশাপ্রকাশ করেছেন বাইডেন। তবে চীন নিয়ে তাদের মধ্যে আদৌ কোনো কথা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি কোনো নেতাই।
রাশিয়ার শীর্ষ নেতার সঙ্গে নিজের বয়সের ১০ প্রজন্ম পার্থক্য বলেও বাইডেন বৈঠকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আমেরিকা সাইবার সক্ষমতায় পারলে ৬০-এর দশক ফিরিয়ে আনতে পারে কিন্তু সেটি ঠিক হবে না বলে পুতিনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বাইডেন। পাশাপশি তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের যথেষ্ট সখ্যতা ছিল বলে বারবার উল্লেখ করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। তারা বলেছিল, ট্রাম্পকে সিংহাসনে বসানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্যোগী ছিলেন পুতিন। এখন দেখার বাইডেন-পুতিনের এই বৈঠকের পর কতটা কাছাকাছি আসে এই দুই শক্তিশালী দেশ। আর এটা সম্ভব হলে লাভবান হবে গোটা বিশ্বই।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৫৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ