নিজেদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ইরান। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশটি যথেষ্ট পরিমাণ টিকা আমদানি করতে ব্যর্থ হওয়ার পর নিজেদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ইরান।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলেও ব্যাপক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় টিকা আমদানিতে বাধার মুখে পড়ে ইরান। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে সামান্য পরিমাণ টিকা আমদানিতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাঈদ নামাকি বলেছেন, ‘রোববার ইরানের তৈরি কোভিড টিকা ‘কোভ-ইরানব্লেসিং’ ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
টিকাটি তৈরি করেছে ইরানের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি শিফাফার্মড। মূলত মৃত ভাইরাসের মাধ্যমে এই টিকা তৈরি করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই টিকার ট্রায়ালে দেখা গেছে যে, টিকা করোনায় কার্যকর ও নিরাপদ।
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, কিউবার সঙ্গে যৌথভাবে আরও একটি টিকা নিয়ে তারা কাজ করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ওই টিকাও ইরানের টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাইরে থেকে টিকা আমদানি করতে না পারলেও নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়বে তারা। আর এজন্যই দেশটিতে স্থানীয়ভাবে টিকা পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সেতাদ জানিয়েছে, তাদের কোম্পানি শিফা ফার্মড মাসে এক কোটি বিশ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা সব দেশে বিতরণের জন্য যে কোভাক্স কর্মসূচি নিয়েছে, ইরান তাতে যোগ দিয়েছে। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, সরকারের এই উদ্যোগের পাশাপাশি তারা চীনের উদ্ভাবিত একটি টিকা আমদানির পরিকল্পনা করছে।
কোভিড টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট
এদিকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে গেলে কোভিড টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট, দাবি করছেন একদল গবেষক। গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। করোনা সেরে গেলে টিকার একটি ডোজ যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম, ধরা পড়েছে গবেষণায়। হায়দরাবাদের এআইজি হাসপাতালে ২৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর গবেষণা চালানো হয়েছে।
১৬ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁরা সকলেই কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছিলেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করতেই মূলত এই গবেষণা চালানো হয়েছিল। কিন্তু গবেষণার অন্যন্য তথ্যও চমকে দিয়েছেন গবেষকদের।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস-এ এই গবেষণার তথ্য প্রকাশিতও হয়েছে। কোভিড টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার আগে যাঁদের পূর্বে করোনা সংক্রমণ হয়েছিল, তাদের শরীরে বেশি পরিমাণ অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে যাদের টিকা নেওয়ার আগে কোভিড হয়নি, তাদের শরীরে অপেক্ষাকৃত কম অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি কোভিড সেরে যাওয়ার পর, টিকার প্রথম ডোজ নিয়েই তাঁদের শরীরে মেমরি-টি সেল উৎপন্ন হয়েছে বেশি পরিমাণে।
গবেষকদের দাবি, কোভিড সেরে যাওয়ার তিন থেকে ছয় মাস পর ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের কার্যকারিতা প্রায় দুটি ডোজের সমান। গোটা বিশ্বে এই গবেষণার ফল স্বীকৃতি পেলে দেশের বাকি যাঁরা এখনও টিকা পাননি, তাঁদের সুবিধা হবে। ভ্যাকসিনের ঘাটতিতে সংকটে রয়েছে বিশ্বের গরিব দেশগুলো।
ভ্যাকসিনের একটি ডোজ যদি শরীরের জন্য যথেষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। এভাবে ভ্যাকসিন বাঁচবে প্রচুর। যা অন্যের সাহায্যে আসবে সহজেই বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৭০৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ