ইয়েমেনে প্রতি বছর ২ কোটি ৬০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব আল-কুব্বাত। এছাড়া প্রতি পাঁচ মিনিটে অন্তত একটি শিশু মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া, দেশের মোট হাসপাতালের শতকরা ৫০ ভাগ অর্থাৎ অর্ধেক হাসপাতালে সেবা দেয়ার মতো ব্যবস্থা এখন আর নেই বলে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব আল-কুব্বাত।
সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোটের আগ্রাসন ও অবরোধের কারণে দেশটিতে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সৌদি জোটের আগ্রাসন ও অবরোধের কারণে ইয়েমেনের স্বাস্থ্যখাতের ওপরে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সে সম্পর্কে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব আল-কুব্বাতি।
তিনি জানান, সৌদি জোটের আগ্রাসনের কারণে ইয়েমেনের মোট ৫২৭টি হাসপাতাল সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
আল-কুব্বাতি যে প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন তাতে বলা হয়েছে- প্রতিবছরই ইয়েমেনে অন্তত আট হাজার নারী মারা যাচ্ছে এবং দুই কোটি ৬০ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার।
ইয়েমেন বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির যৌথ এক রিপোর্টে বলা হয়, সেখানে লক্ষ লক্ষ শিশু জরুরি পুষ্টিজনিত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় ৬ বছরের গৃহযুদ্ধে ইয়েমেনে বহু শিশুর মৃত্যু হয়েছেI অপুষ্টির কারণে সেখানে ৫ বছরের নিচে ৪ লক্ষ শিশু এ বছর মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেI
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র, টমসন ফিরি বলেছেন, ইয়েমেনে পুষ্টিজনিত রেকর্ড পরিমান শিশু মৃত্যুর কারণে, ইয়েমেন এখন বড় ধরণের দুর্যোগের মুখেI তাদের অনতিবিলম্বে পুষ্টিজনিত খাদ্য সহায়তা প্রয়োজনI
ইয়েমেনে এখন ৮০ শতাংশ মানুষ ত্রাণের ভরসায় বেঁচে আছেন। আধপেটা খেয়ে বা না-খেয়ে। দেশে এখন ঘরে ঘরে শিশুরা ধুঁকছে। হাসপাতালে শিশু চিকিৎসা বিভাগের বিছানায় কাতারে কাতারে ক্লান্ত, পাঁজর বের করা, বিস্ফারিত চোখ আর লিকলিকে শিশুরা শুয়ে আছে। অপুষ্টির পাশাপাশি ডায়েরিয়া আর ডিপথেরিয়ার প্রকোপও রয়েছে।
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইয়েমেনে প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে এক জন অপুষ্টির শিকার।
গত বছরের শেষদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘ইয়েমেনে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ আসতে চলেছে। গত কয়েক দশকে যা পৃথিবীর মানুষ দেখেনি। দ্রুত পদক্ষেপ না-করলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে।’’
তবে ইয়েমেনের চিকিৎসকদের মতে, সেই দিন আসতে দেরি নেই। ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
জাতিসংঘ ইয়েমেনের এই পরিস্থিতিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সঙ্কট’ বলে বর্ণনা করছে। এরপরও সরকারিভাবে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়নি।
২০১৮-এর শেষ দিকে জাতিসংঘের আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারির কারণে দেশটিতে ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ, রেমিট্যান্স কমে যাওয়া, পঙ্গপাল, বন্যা ও তহবিল অপ্রতুলতার কারণে ত্রাণ হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য সমস্যা উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে।
ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে ইরান–সমর্থিত হুতিদের যুদ্ধ চলছে। এতে এক লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ইয়েমেনও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। হুতিরা সানা এবং বড় বড় শহরগুলো নিজেদের দখলে রেখেছে। তবে তেহরান সরাসরি হুতিদের সহায়তা করার বিষয়টি স্বীকার করে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ