ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হতেই বিপদের আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গ্রিস, স্পেন, ফ্রান্সের মত দেশে আর বাধ্যতামূলক নয় মাস্ক। বিদেশি পর্যটকরাও ইউরোপের একাধিক দেশে ঘুরতে যাচ্ছে। আর এখানেই দুশ্চিন্তায বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
সংস্থাটির ইউরোপ শাখার প্রধান হান্স ক্লুগ সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিপদ এখনও কাটেনি। বাড়ছে সামাজিক মেলামেশা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে নানা উৎসব ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবিষয়ে সকলকে সতর্ক করে দিতে চাইছে।’
ইউরোপের সব দেশেই সংক্রমণ কমতে থাকায় করোনা বিধি শিথিল করা হয়েছে। জার্মানিতে মাস্ক পরা আর বাধ্যতামূলক নয়। ব্রিটেনেও তাই। ফ্রান্সে দেখা যাচ্ছে পুরনো দিনের মতোই সবাই একসঙ্গে বাইরে বেরিয়ে খাওয়া দাওয়া করছেন। নেই রাতের কারফিউও। বিদেশি পর্যটকদের গ্রিস ও স্পেনে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে ফ্রান্সে শুরু হয়ে গিয়েছে ফরাসি ওপেন। শনিবার থেকে ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হবে।
ক্লুগ বলেছেন, ‘সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু— এ সব কমলেও মানুষ যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত হচ্ছে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে নির্দ্বিধায় চলা ফেরা শুরু করেছে, তাতে বিপদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্যারিসে এখন ফরাসি ওপেন চলছে। শনিবার থেকে ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। তাতে মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলা দেখতে আসবেন দর্শক। বিভিন্ন দেশের দলও আসবে। সামনের মাসে ব্রিটেনে উইম্বলডন শুরু হবে।’
ক্লুগ আরও বলেন, ‘ইউরোপে গত ৬ মাসে ৪০ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রীষ্মে এর গতি আরও বাড়াতে হবে। কমপক্ষে ৮০ ভাগ মানুষের টিকা নেওয়া হয়ে গেলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। তার আগে কেউই সুরক্ষিত নন বলে সতর্ক করে দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ শাখার প্রধান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ধনী দেশগুলোতে টিকা প্রদানের হার বেশি হলেও পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এই হার ১৭ শতাংশও হবে না। আর টিকার এক ডোজ পাওয়া মানুষের হার ৩০ শতাংশ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যাদের দুটো ডোজ় নেওয়া হয়েছে তাদের আর মাস্ক না পরলেও চলবে।
ক্লুগ সতর্ক করে বলেছেন, সংক্রমণ কমলেও যেভাবে জমায়েত বাড়ছে, কিংবা মানুষ এক শহর থেকে অন্য শহরে চলে যাচ্ছেন, তা থেকে আবার নতুন করে বিপদ আসতেই পারে। আবার একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে আমেরিকাতেও। সেখানেও মাস্ক পরায় শিথিলতা আরোপ করা হয়েছে। যা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশটির সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি বলেছেন, ‘যারা এখনও টিকা পাননি, তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আগের থেকে বেশি। প্রতিষেধকহীনদের শরীরে আরও বেশি করে জাঁকিয়ে বসবে ভাইরাস। মিউটেশন ঘটিয়ে নতুন ভ্যারিয়্যান্ট তৈরি করবে।’
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসিও বলেন, ‘আলফা স্ট্রেন (ব্রিটেন বা কেন্ট স্ট্রেন) থেকে বেঁচে ফেরার পর এখন আমরা ডেল্টা স্ট্রেনে আক্রান্ত হতে চাই না। ল্যাটিন আমেরিকায় করোনায় ৪ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মৃত্যুর দেশ ব্রাজিলও বলেছে, তারা আর মাস্ক পরার নিয়ম মানার প্রয়োজন দেখছে না। প্রেসিডেন্ট বলসোনারো বলেছেন, যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন এবং যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের আর মাস্ক পরতে হবে না।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবধান না হলে আরও নতুন স্ট্রেন তৈরি হবে। এ অবস্থায় পথ— দ্রুত টিকাকরণ ও নিয়ম মেনে চলা। দেশের টিকাকরণের গতি নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্ট ফাউচি। তবে এখনই ‘জিতে গিয়েছেন’ বলতে চান না তিনি। কারণ দেশবাসীর একটা বড় অংশ এখনও প্রতিষেধক পায়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ