রাজশাহীতে স্বামীসহ পুলিশের দুই এসআই বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আরেক নারী এসআই। বুধবার রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতে মামলাটি দায়ের হয়।
মামলার বাদী ওই এসআই (৩৫) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাজশাহী মহানগর শাখায় কর্মরত। অভিযুক্তরা হলেন- তার স্বামী এসআই ওবাইদুল কবির সুমন (৩৫) ও আরেক নারী এসআই পলি আক্তার (৩০)।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ওই নারী এসআইকে ডিএমপির ওই এসআই বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি যৌতুকের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে তিনি অপর নারী এসআইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে ওই নারী এসআইয়ের ওপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে ওই নারী এসআই ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাজশাহী চলে আসেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওই নারী এসআইকে হেয়প্রতিপন্ন করতে তার নামে ভুয়া অশ্লীল ছবি ও ভিডিও বিভিন্নজনের কাছে পাঠিয়েছেন তার স্বামী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে তিনি এসব পাঠিয়েছেন। ফলে ওই নারী এসআই তার স্বামীসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
স্ত্রীকে নির্যাতন ও তার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত এসআইয়ের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা তিনি ধরেননি।
মামলা সম্পর্কে রাজপাড়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত থেকে আমরা মামলার কপি এখনো পাইনি। কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩ বছরে ৪ হাজার মামলা
সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা। পরে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩ বছরে মামলা হয়েছে প্রায় চার হাজার।
আইন পাসের পর শুধু ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালেই মামলা হয়েছে এক হাজার ৫০৪ টি। প্রাথমিকভাবেই ৬৩৩ টি খারিজ করে দেয় আদালত। আর তিন বছর ধরে তদন্ত চলছে ৮৭১ টির।
আগের আইসিটি আইন ও বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা সারা দেশের মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে। এই আদালতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা এসেছে ২ হাজার ৬৮২টি। এর অর্ধেকের বেশি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলা।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গত সাত বছরে ৯৯০টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে চার শর বেশি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়। অনেক মামলায় অভিযোগ গঠনের উপাদান না থাকায় আসামিরা অব্যাহতি পান।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, কেবল ২৫টি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। এর ২৪টি আইসিটি আইনের এবং একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা। আইনজীবী বলছেন, বেশিরভাগই আপসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলার শিকার ব্যক্তিরও আইনি প্রতিকার পাওয়ার বিধান নেই। বেশিরভাগ মামলাই হয় ২৫ ও ২৯ ধারায়। যাতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও মানহানির অভিযোগ তোলা হয়। ফলে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তার না করা, জামিন দেয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান করার পরামর্শ এই আইনবিদদের।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ