গত বছরের জুনে চুয়াডাঙ্গায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওষুধ ও চিকিৎসার অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে বরাদ্দ দেয়া দেয়া ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে চার কোটি টাকার হদিস না পাওয়ার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
রোববার (৬ জুন) বিষয়টি তদন্ত করতে চুয়াডাঙ্গায় আসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুভাষ রনজন হালদার ও অফিস সহকারী আলিমুজ্জামান হালদার। কমিটির প্রধান ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ।
অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দের টাকা আসার পর চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীরকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন। ওই বোর্ড স্থানীয়ভাবে ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনাকাটা শেষে সবকিছু বুঝে নিয়ে বিল পরিশোধের জন্য জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠায়।
এই কেনাকাটায় চরম অনিয়ম হয়েছে বলে ২০২০ সালের ২৮ জুন প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম। এতে বলা হয়, দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। সাড়ে চার কোটি টাকার কোনো ওষুধই কেনা হয়নি।
সংবাদ প্রকাশের পর ২০২০ সালের ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর বাদী হয়ে দুই সংবাদকর্মীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
মামলায় আসামি করা হয় দৈনিক জনবাণী পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা আহসান আলম ও চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় পত্রিকা পশ্চিমাঞ্চলের সংবাদদাতা সাইফ জাহানকে। তারা গত ৮ জুলাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
মামলার বাদী ডা. শামীম কবীর বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তদন্ত কমিটি সারাদিন চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ক্রয়কৃত ওষুধের স্টক, এমএসআর প্রাপ্তির নথি, মজুদ বহি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে।
এ ছাড়াও তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, চার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করেও ডা. এএসএম মারুফ হাসান ও ডা. শামীম কবীরের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা বলেছেন, বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় তারা কোনো মন্তব্য করবেন না।
তবে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ মুঠোফোনে বলেন, ‘দুদকে জনৈক আকবর আলী একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। দুদক সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিযোগের সত্যতা নিরুপণের জন্য আমাকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। আমি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।
সমস্ত ডকুমেন্ট ও তথ্য-উপাত্ত, ফটোকপি করে নিয়ে এসেছি। সেগুলো যাচাই-বাচাই ও পর্যালোচনা করতে হবে। তবে অভিযাগকারীর ঠিকানা অসম্পূর্ণ। তিনি শুধুমাত্র সদর উপজেলা লিখেছেন। তার মোবাইল নম্বরও নেই। আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।
আসলে একপক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত দেওয়া যায় না। আমার ইচ্ছা ছিলো তার সাথেও কথা বলার। কিন্তু তিনি অসম্পূর্ণ ঠিকানা দিয়েছেন।’তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান ও সদর হাসপাতালের সাবেক আরএমও ডা. শামীম কবিরের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন কার্যালয়, চুয়াডাঙ্গায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে করোনাভাইরাস মহামারীতে ওষুধ, এমএসআর দ্রব্যদি না কিনে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি যিনি দিয়েছেন, আসলে তার সাথে কথা না বলতে পারাটা আমার আফসোস থেকে গেল।
আমার সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে যদি মনে হয় আমার আবার চুয়াডাঙ্গায় যাওয়ার প্রয়োজন আছে, তাহলে আমি যাব। আমি নিরপেক্ষ এবং সততার সাথে তদন্ত প্রতিবেদন দেব।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ