মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুর ৩টায় বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের ২১তম বাজেট এটি, বর্তমান অর্থমন্ত্রীর তৃতীয়।
‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে কম সংখ্যক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে দেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। যারা উপস্থিত রয়েছেন তাদের মানতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।
এবারের বাজেটে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেটটি করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
নতুন বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।
বাজেট উপস্থাপনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘতর প্রভাব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট ক্ষতি পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এবং বিশেষভাবে স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়োজন মেটানো এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়েছে।
বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার
ঘাটতি পূরণে নতুন বাজেটে বৈদেশিক খাত থেকে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রীর পেশ করা এই বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আগামী বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
দেখা যাচ্ছে, ঘাটতির অর্থ জোগাতে নতুন বাজেটে সরকার ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র ও বিদেশি ঋণ বাড়াতে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য বৈদেশিক খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা থাকলেও চলতি বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা হিসেবে ৯২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
তথ্য বলছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় বাজেটে বিদেশি ঋণ বাড়ছে। সহজে বিদেশি ঋণ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াটাও এর আরেকটি কারণ। অবশ্য এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক অনুদান পাইপলাইনে রয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা মহামারির মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
করোনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ
আগামী অর্থবছরেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য পুনরায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় এ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, বিগত বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বিপুল বরাদ্দ রেখেছিলাম। এ ছাড়া, যেকোনও জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রেখেছিলাম।
করোনা প্রাদুর্ভাবের বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্বব্যাপী অব্যাহত মহামারির ভয়াবহ প্রকোপের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বিগত বাজেটের মতো এবারও অঙ্গীকার করছি, এ মহামারি মোকাবিলায় যা করণীয় তার সবকিছুই সরকার করে যাবে। সে কারণে আগামী অর্থবছরেও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য পুনরায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
যেভাবে টাকা আসবে
মহামারি করোনার ধাক্কা সামলাতে সরকার আয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। সব মিলে এ করোনাকালীন ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি জিডিপির ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই মোট আয়ের মধ্যে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে কর খাত থেকে আসবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, কর ব্যতীত প্রাপ্তি হচ্ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। তবে করের টাকা দুটি খাত থেকে আদায় করা হবে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আগামী বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
টাকা ব্যয় হবে যেভাবে
অর্থমন্ত্রীর পেশ করা এই বাজেটে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, ঋণ ও অগ্রিম ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা এবং খাদ্য সহায়তা খাতে ৫৯৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
তবে পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বাজেটে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি জিডিপির ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই মোট আয়ের মধ্যে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।
এরমধ্যে কর খাত থেকে আসবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, কর ব্যতীত প্রাপ্তি হচ্ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। তবে করের টাকা দুটি খাত থেকে আদায় করা হবে। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আগামী বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত আয় করমুক্ত
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত বাজেটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিগত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে।
এ ছাড়াও, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী যাদের আয় ৩ লাখ টাকার চেয়ে বেশি তাদেরকে পরবর্তী এক লাখ টাকার জন্যে ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকার জন্যে ১০ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকার জন্যে ১৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার জন্যে ২০ শতাংশ এবং এর বেশি পরিমাণ আয়ের জন্যে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।
কমলো কর্পোরেট কর
বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে নতুন বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেট বক্তব্যে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কর্পোরেট করহার আরও কমিয়ে নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার ৩২.৫০% থেকে ৩০% করার প্রস্তাব দেন তিনি। আর লিস্টেড কোম্পানির জন্য করহার ২৫% থেকে ২২.৫% করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত হলো ২৩ শতাংশ। সরকার এই অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কর্পোরেট করহার কমিয়ে আনলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হতে পারে। বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে এবং কোভিড ১৯ চলমান পরিস্থিতিতে তাই বাংলাদেশেও করহার পুনঃনির্ধারণ করা সময়ের দাবী।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সাথে একটি প্রতিযোগিতামূলক করহার দেশের বাণিজ্যের প্রসারে ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ও ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা পূরণকল্পে ও ব্যবসা বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালের অর্থ আইনে কর্পোরেট করহার ৩৫% থেকে ৩২.৫০% করা হয়েছিল। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কর্পোরেট করহার আরও কমিয়ে নন-লিস্টেড কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে করহার ৩২.৫০% থেকে ৩০% করার প্রস্তাব করছি। অনুরূপভাবে লিস্টেড কোম্পানির জন্য করহার ২৫% থেকে ২২.৫% করার প্রস্তাব করছি।”
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের
বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ক-করহার বাড়ানো হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
মোবাইল ফোন
বাজেটে মোবাইল ফোন (ফিচার ফোন) আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদেশি মুঠোফোনের দাম আরও বাড়তে পারে।
বিদেশি মাংস
মাংস আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট। আবার ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদেশি মাংসের দাম বাড়বে। দেশীয় খামারিদের সুরক্ষা দিতে কাজটি করেছে সরকার।
মাশরুম
বিদেশি মাশরুমের দাম অনেকটাই বাড়তে পারে। এই মাশরুম আমদানিতে আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাশরুম আমদানিতে ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য আরোপের কথা বলা হয়েছে।
বিদেশি গাজর-টমেটো
চাষিদের সুরক্ষা দিতে গাজর, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, টমেটো ও কমলা আমদানিতে ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য আরোপের কথা বলা হয়েছে। এতে এসব পণ্য আমদানিতে কম দাম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া যাবে না। দাম বাড়তে পারে। গাজরের ওপর ভ্যাটও আরোপ করা হয়েছে।
শিল্প লবণ
শিল্প লবণের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এত দিন শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি হতো। এখন দুই লবণের করহারের সমন্বয় করা হয়েছে।
বিদেশি সাবান
সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম বাড়তে পারে।
চুইং গাম
এর ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়বে।
বিদেশি বিস্কুট
বিস্কুট ও সমজাতীয় সুগার কনফেকশনারির ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম অনেকটাই বাড়তে পারে।
বিদেশি রড ও সমজাতীয় পণ্য
আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে দাম বাড়তে পারে। অবশ্য রডের বাজার মূলত দেশীয় কোম্পানির দখলে।
সিগারেটের দাম বাড়ছে
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে ধূমপায়ীদের এখন থেকেই সিগারেট কিনতে বেশি খরচ করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় বলেছেন, তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার দাম ৩৯ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার দাম ৬৩ টাকা ও তদূর্ধ্ব, উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১০২ টাকা ও তদূর্ধ্ব, অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৩৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং এই তিনটি স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।’
তবে স্থানীয় বিড়িশিল্পের ওপর বাড়তি চাপ দেননি অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে তৈরি ফিল্টার বিযুক্ত বিড়ির ২৫ শলাকার দাম ১৮ টাকা, ১২ শলাকার দাম ৯ টাকা ও ৮ শলাকার দাম ৬ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি। ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার দাম ১৯ টাকা ও ১০ শলাকার দাম ১০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার দাম ৪০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের দাম ২০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।’
যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যের করহার কমানো হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। উল্লেখ্য, বাজেটে শুল্ক-করের প্রস্তাব ঘোষণার পরই কার্যকর হয়।
স্যানিটারি ন্যাপকিন
দাম কমতে পারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের। কারণ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে উৎপাদিত ন্যাপকিনের সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
করোনার কিট
সুরক্ষা সামগ্রীতে শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা আগেই ছিল। এবার করোনা শনাক্তের আরটি-পিসিআর কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।
শৌচাগারের প্যান
গ্রামের মানুষের স্যানিটেশন সুবিধা বাড়াতে দেশে উৎপাদিত লং প্যানের সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ছিল।
অটিজম সেবা
এ সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
ইস্পাত
ইস্পাতের ওপর সুনির্দিষ্ট শুল্ক টনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
মুরগি/মাছের খাবার
উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর খাবারের দাম কমানোর সুযোগ তৈরি হবে।
ক্যানসারের ওষুধ
ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামালে আবার শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। এতে ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনে ব্যয় কমবে। এ ছাড়া ওষুধ শিল্পের আরও কিছু কাঁচামালে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেল ডিভাইস
বেশ কিছু মেডিকেল যন্ত্রাংশ উৎপাদনে উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
দেশি এলপিজি সিলিন্ডার
দেশে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
দেশি খেলনা
দেশে খেলনা উৎপাদনে উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছে সরকার।
ডায়ালাইসিসের টিউব
ডায়ালাইসিস সেবায় ব্যবহার করা ব্লাড টিউবিং সেটের কর কমানো হয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গের কর্মী নিয়োগে মিলবে কর ছাড়
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কোনো প্রতিষ্ঠান তৃতীয় লিঙ্গের কর্মী নিয়োগ দিলে কর ছাড় পাবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, দেশের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সামাজিক এবং অর্থনীতির মূলধারায় আনতে সরকারের যে চেষ্টা, তা ফলপ্রসূ করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে তিনি বলেছেন, ‘যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের অধিক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়, তবে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করছি।’
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর একটি অংশ হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যান্য মানুষের চেয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে।’
কর্মক্ষম এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে বলেও জানান তিনি।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দেশ
বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যে সকল আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর সেগুলেঅ অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে না, বা হ্রাস পাবে। ফলে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তীকালে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি উল্লেখ থাকছে এবারের বাজেটে।বাজেট (প্রস্তাবিত) উপস্থাপনকালে এ তথ্য তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা,ডব্লিউটিও’র বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট মেধাসত্ত্ব (TRIPS) চুক্তির আওতায় ওষুধ শিল্পে পেটেন্ট প্রটেকশন প্রদান থেকে অব্যাহতির সুবিধা এবং রফতানি পণ্যে/শিল্পে ভর্তুকি প্রদানের সুবিধা হ্রাস পাবে। সহজ শর্তের বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান সহায়তা হ্রাস পাবে। যদিও ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের শ্রেণিবিভাজনে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর থেকে নমণীয় ঋণের সঙ্গে শর্তযুক্ত অনমণীয় ঋণ গ্রহণ করে আসছে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, সেটি উল্লেখ করে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, আমাদের জন্য সুখবর হলো— আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ন্যূনতম ৫টি বছর সময় পাবো।
ইউএন-সিডিপি’র সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য এ সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তবে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ উত্তরণের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এ সময়কালের মধ্যেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও অনেক বাড়াতে সফল হবে বলে আশা করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ