করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে সারা বিশ্ব যেভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে, তাতে প্রকৃতি নিজের শুশ্রূষা কিছুটা হলেও করতে পেরেছে। বাধ্য হয়ে আরোপিত লকডাউনের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ আগের চেয়ে অনেক কমেছে, কমেছে বায়ুদূষণও। কিন্তু এত সবেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কিন্তু থামানো যাচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে লকডাউনের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের লাভ হলেও, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর এর প্রভাব নগণ্য।
এদিকে তাপ-সম্পর্কিত সব মৃত্যুর ক্ষেত্রে গড়ে ৩৭ শতাংশ মৃত্যুকে সরাসরি বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। তারা সতর্ক করে বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও বাড়লে প্রাণহানি আরও বেশি ঘটতে পারে।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল এ তথ্য জানিয়েছেন।
৭০ জন আন্তর্জাতিক গবেষকের একটি দল বৈশ্বিক উষ্ণায়নে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব কতটা পড়েছে, তা নিয়ে নতুন একটি গবেষণা করেছেন। গবেষণা নিবন্ধে লেখকেরা বলেছেন, এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম।
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ সাময়িকীতে। এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা ৪৩টি দেশের ৭৩২টি জায়গার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে দেখা গেছে, তাপ-সম্পর্কিত সব মৃত্যুর ক্ষেত্রে গড়ে ৩৭ শতাংশ মৃত্যুকে সরাসরি বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, সে ঝুঁকি সম্পর্কে আগের নানা গবেষণায় পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা, খরা, দাবানল এবং অন্য চরম ঘটনাগুলো উষ্ণায়নের ফলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।
পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে, তা নির্ভর করে মানুষ কত দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারবে তার ওপর। ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ ঘটলেও করোনা মহামারির সময় তা কমেছে।
গবেষণা নিবন্ধের জ্যেষ্ঠ লেখক আন্তোনিও গ্যাসপারিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সুদূর ভবিষ্যতে কিছু নয়। আমরা পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানসংক্রান্ত প্রভাব ছাড়াও ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পরিমাপ করতে পারি।’
গবেষকেরা বলেন, তারা যে পদ্ধতিতে গবেষণা করেছেন, তা যদি বিশ্বব্যাপী বর্ধিত করা যায় তবে দেখা যাবে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর প্রায় এক লাখের বেশি মানুষের তাপজনিত মৃত্যু সংঘটিত হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পৃথিবী নিজেই সেরে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়াবহ বিষয় থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা অতিকল্পনা অনেককেই পেয়ে বসেছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, পৃথিবীর উষ্ণায়নের প্রবণতার ওপর লকডাউনের প্রভাব একেবারেই কম। যতটুকু প্রভাব পড়েছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তাতে মাত্র শূন্য দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হেরফের হতে পারে। এই হেরফেরও একেবারে কম নয়। তবে শুরুতে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তার তুলনায় হতাশাজনকই বলতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় প্রভাব পড়ছে বলে জানা যায় এর সবগুলো ঘটতে শুরু করেছে বাংলাদেশেও৷ আশংকার কথা হলো, দিন দিন বাড়ছে এগুলো৷
বছরের প্রায় দশ মাস গরম থাকা, শুধু গরম বললে ভুল হবে— তীব্র গরম৷ বছরে কোনো রকমে দুই মাস তাপমাত্রা একটু কম থাকে, যার মধ্যে এক মাসকে আমরা এখন শীতকাল বলে ধরে নিই৷ সেটি সাধারণত নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়৷ এক মাস পর শীত আসবে, অথচ তখনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে৷ বছরের মাঝখানে কারণে-অকারনে শুরু হয় অতিবৃষ্টি, যার ফলাফল হলো বন্যা৷
এসব ঘটনাকে গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছেন৷ এসবের ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমছে, বাড়ছে নিত্য নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অসুখ-বিসুখ৷ সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘরহারা মানুষের সংখ্যা৷ ফলাফল হিসেবে শহরাঞ্চলে বস্তিবাসীর সংখ্যাও বাড়ছে৷ বাড়ছে মৃত্যুহার।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমাধান করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে, গাড়ি, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদির ব্যবহার কমাতে হবে, সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বনায়নের দিকে জোর দিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ