বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের খামখেয়ালিপনা পূরণে যখন হাজার-হাজার কোটি টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় যখন বরাদ্দকৃত অর্থও লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, তখন এক নয়া নজির স্থাপন করলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। দেশজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে জুন থেকে তিন মাসের বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। শুধু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীই নন, তিন মাস বেতন নেবেন না তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। ওই বেতন জাতীয় ত্রাণ তহবিলে দান করা হবে বলে জানিয়েছেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
সোমবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় মালয়েশীয় গণমাধ্যম নিউ স্ট্রেইট টাইমস।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা তাদের মাসিক বেতন না নিলেও এই টাকা দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পড়ে থাকবে না। বরং করোনা মহামারি মোকাবিলার অংশ হিসেবে তা মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ট্রাস্ট ফান্ডে বেতনের পুরো টাকাই প্রদান করা হবে। মহামারি মোকাবিলায় সরকারের অর্থিক সহায়তা নিয়ে সোমবার দেওয়া এক বিশেষ ভাষণে এই ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন।
মালয়েশিয়ার জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্য পেমারকাসা প্লাস নামে নতুন অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন জানান, করোনা সংক্রান্ত ব্যয় মোকাবিলার জন্য গঠিত জাতীয় দূর্যোগ ত্রাণ তহবিলে তাদের এই বেতনের অর্থ প্রেরণ করা হবে।
করোনা ভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ্বের মতো বিপর্যস্ত মালয়েশিয়াও। তবে মহামারি মোকাবিলায় সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে চালানো প্রচেষ্টার প্রশংসা করে মহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেন, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরকার ও সামাজিকভাবে সবার এক সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের মাধ্যমে মহামারি মোকাবিলার পদ্ধতিতে সরকার জোর দেয়া অব্যাহত রাখবে।
দেশের সবাইকে করোনা বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা মহামারি শিগগিরই শেষ হোক, এটাই প্রার্থনা করি। সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা সকলের প্রতি শক্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে মঙ্গলবার থেকে সারা মালয়েশিয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন কার্যকর হতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মুহিউদ্দিন বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এর সফলতা আপনাদের ও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। চলাচল সীমিত করতে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শেকল ভাঙতে সরকার প্রায় সকল অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাত বন্ধ করে দিয়েছে।’
তিনি সবাইকে বাসায় থাকতে এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সবসময় মেনে চলতে অনুরোধ জানান। তা না হলে মহামারি মোকাবেলায় যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা ব্যর্থ হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
সংক্রমণরোধে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন চলাকালীন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে দেশটির সিনিয়র (প্রতিরক্ষা) মন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি বলেছেন, নিতান্ত প্রয়োজনে কেউ বের হলে চলাচল ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এক গাড়িতে সর্বোচ্চ দুজন চলতে পারবেন। বাইরে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। আন্তঃজেলা ও আন্তঃরাজ্য ভ্রমণের অনুমতি থাকবে না।
সিনিয়র মন্ত্রী জানান, লকডাউনের মধ্যে শারীরিক সংস্পর্শে না এসে খেলাধুলা ও জগিং করা যাবে। তবে তা সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে করতে হবে। করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন, এমন বক্তির সন্তানদের জন্য কিন্ডারগার্টেন ও নার্সারি স্কুল খোলা থাকবে। খোলা থাকবে সুপার মার্কেট, রেস্টুরেন্টসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির প্রতিষ্ঠান।
ফুড ও বেভারেজ, স্বাস্থ্যসেবা, পানি, বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জরুরি সেবা, সমাজকল্যাণ ও মানবিক সহায়তাকেন্দ্র, পয়ঃনিষ্কাশন, গণপরিবহন, নৌ ও স্থলবন্দর, গণমাধ্যম, টেলিযোগাযোগ, কুরিয়ার সার্ভিস, ব্যাংক-বিমা, ই-কমার্স, তেল সরবরাহ, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হোটেল ও আবাসন, অতি জরুরি কন্সট্রাকশন ও ডেলিভারি সার্ভিস খোলা থাকবে। অন্যান্য খাতের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
মঙ্গলবার (১ জুন) সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মালয়েশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৭ জন। এতে করে মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৬ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন প্রায় ৭ হাজার সংক্রমিত রোগী নিয়ে মালয়েশিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৫৭ জন।
৪০ বিলিয়ন রিঙ্গিতের প্যাকেজ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়া ফুল লকডাউনে ৪০ বিলিয়ন রিঙ্গিতের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
দেশটির সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ প্যাকেজটিতে সরাসরি আর্থিক ক্ষতিগ্রস্তরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আয়ের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এসএমই সময়ে যারা ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা তিন মাস বা ছয় মাসের মধ্যে ৫০% হারে ৩০ মিলিয়ন মূল্যমানের প্রায় পাঁচ মিলিয়ন গ্রহীতা জড়িত থাকবেন বলে জানিয়েছেন মুহিউদ্দিন।
তিনি আরও বলেছেন, পরিবারের ওপর নির্ভর করে ১০০ থেকে ৫০০ রিঙ্গিতের মধ্যে বান্টুয়ান প্রহাতিন রাকিয়াত প্রদানে ১.২ বিলিয়ন বরাদ্দ করেছে সরকার।
ট্যাক্সি এবং বাস অপারেটরদের জন্য একটি ১ বিলিয়ন রিঙ্গিতের প্রকল্প চালু করা হবে। ট্যাক্সি, বাস এবং ই-হিলিং চালকরাও ৫০০ রিঙ্গিত করে সহায়তা পাবেন।
জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির রোল আউট বাড়াতে তিনি বলেছেন, টিকা কেন্দ্রগুলোতে অসুবিধাগুলোর মুখোমুখি ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য সরকারি সম্পদ যেমন বাস এবং অন্যান্য যানবাহনকে একত্রিত করা হবে।
মহামারির সূচনা থেকেই সরকারের দেয়া উদ্দীপনা প্যাকেজগুলোতে ৩০০ বিলিয়নেরও বেশি অংশ নিয়েছেন বলে ভাষণে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, মজুরি ভর্তুকি এবং অন্যদের মধ্যে ইউটিলিটি বিলের ছাড়ের মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ