
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকেই আফগানিস্তানের আশপাশে সহিংসতা আরও তীব্র হয়েছে। আফগানিস্তান টাইমস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রায় ২০০ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে স্কুলছাত্রও রয়েছে।
এদিকে নিককেই এশিয়ার বরাত দিয়ে ডেইলি হান্ট খবর প্রকাশ করেছে, প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ওয়াশিংটনের অনেকেই। তাদের বক্তব্য হলো, সেনা সরিয়ে নেওয়ার ফলে যুদ্ধবিধস্ত দেশটিতে যে শূন্যতা তৈরি হবে সেখানে দখল নিতে পারে চীন।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে মার্কিন ও ন্যাটো জোট। এই প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা অনুযায়ী গত ১ মে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়। ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহারের কাজ শেষ হবে।
আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। ১১ সেপ্টেম্বরের পর কাবুলে মার্কিন দূতাবাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা আফগানিস্তানে থাকবে।
খুব কম সময়ের মধ্যেই আফগানিস্তানে তালেবানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও নানা স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন, যা সরকার পতনের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পরে আর কিছুই হবে না বলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিলেন আফগান সরকার। এখন তারাই বিদেশি সেনাদের দীর্ঘকালীন উপস্থিতি কামনা করছে।
সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আফগান সরকারের বক্তব্য ও পদক্ষেপের মধ্যে কোনো মিল নেই। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আনার বা আফগানিস্তানকে রক্ষার দাবি করার আগে আফগানদের জাতীয় ঐক্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এই মুহূর্তে ফারয়াবে যা ঘটছে তা হতাশা ও রাজনৈতিক বিভেদের উদাহরণ। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পদক্ষেপ সাধারণ শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পক্ষে এটি সত্যিকার অর্থে উপযুক্ত নয়।
প্রেসিডেন্ট ঘানি সেখানে এমন একজন গর্ভনর নিযুক্ত করেন যাকে স্থানীয়দের পছন্দ নয়। এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার পরে গর্ভনর অফিসকে জিম্মি করা হয়।
আগানিস্তান টাইমস জানিয়েছে, এ বছরের শুরুর তিন মাসে দেশটিতে প্রায় ২ হাজার জন নিহত হয়েছে। আফগানিস্তান যেহেতু শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাই এ ধরনের একতরফা সিদ্ধান্তগুলো বন্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটে সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির শুনানি চলাকালে ইন্দো-প্যাসিফিক সুরক্ষা বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব ডেভিড হেলভি বলেন, এটা স্পষ্ট যে অঞ্চলটির আশপাশে বেশ কিছু দেশ আছে যারা সেখানে ইন্টারেস্ট দেখাতে পারে এবং তারা আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে।
বিশেষ করে আফগানিস্তানের প্রতি চীনের যথেষ্ট ইন্টারেস্ট রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে সেখানে তা হ্রাস করার ক্ষেত্রে চীনারা প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করবে। অবশ্যই এটা এমন কিছু, যা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হবে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পরই বিষয়টির প্রভাব নিয়ে ওয়াশিংটনের অনেকেই গভীর উদ্বেগ জানায়। তাদের শঙ্কা, সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর কাবুলে সংখ্যালঘু ও নারীদের অধিকার হ্রাস পাবে এবং গণমাধ্যম ও আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ভেঙে পরবে।
মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর মার্শা ব্ল্যাকবার্ন পেন্টাগনকে প্রশ্ন রেখে বলেন, বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের আফগানিস্তান থেকে ইরান পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা। সেই হামলার জেরে সন্ত্রাস দমনের নামে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল ও ভয়ানক। আর সন্ত্রাসবাদের সমস্যার সমাধান তো অনেক দূরের বিষয়।
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা ছাড়াও ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর কয়েক হাজার সেনাসদস্য রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ন্যাটোও সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। একটি দায়িত্বশীল ও সুশৃঙ্খল পন্থায় আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করে চীন। আফগানিস্তানে একটি মসৃণ রূপান্তর নিশ্চিত করার পাশাপাশি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যাতে বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য এ বিষয় দরকার বলে মন্তব্য করেন ঝাও লিজিয়ান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ