করোনায় একদিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু দেখল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ১৩৬ জন। এতে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৯৯৩ জনে। যদিও আক্রান্ত ও মৃত্যুহারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গোটা ভারতে।
শুক্রবার (১৪ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, পশ্চিমবঙ্গে ৭০ হাজার ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভি এসেছে ২০ হাজার ৮৪৬ জনের। আক্রান্তের হার ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
উত্তর ২৪ পরগনায় সংক্রমণ ৪ হাজারের উপরে রয়েছে। তার পরই কলকাতা। উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪ হাজার ১৯৭ ও ৩ হাজার ৯৫৫ জন।
এছাড়া কলকাতায় ৪২ জন এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাওড়ায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ১২ জন মারা গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ১৩১ জন। এখনও পর্যন্ত সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বর্তমানে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৯২ জন।
রেকর্ড মৃত্যু দেখল পশ্চিমবঙ্গ
শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত ১৩৬ জন করোনা রোগীর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতার বাসিন্দা যথাক্রমে ৪২ ও ৩৪ জন। এ ছাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১২, দার্জিলিংয়ে ছয়, হাওড়া, হুগলি এবং বীরভূমে পাঁচ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। জলপাইগুড়ি, নদিয়া, বাঁকুড়া এবং দুই দিনাজপুরে চারজন করে আক্রান্তের মৃত্য হয়েছে। মুর্শিদাবাদে তিন এবং পশ্চিম বর্ধমানে দুইজন করোনায় মারা গেছেন। পূর্ব মেদিনীপুর এবং পূর্ব বর্ধমানে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ১২ হাজার ৯৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে সংক্রমণের দৈনিক হার ছিল ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে শুক্রবার তা বেড়ে ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে টিকাকরণ এবং করোনা টেস্টের ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। শুক্রবার সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে।
এদিকে গত তিন দিন ধরে ভারতে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুহারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শনিবার (১৫ মে) আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১২৩ জন। যা শুক্রবারের তুলনায় প্রায় ১৬ হাজার কম। আর মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৯ জন মানুষের। শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৯ জনের।
এছাড়া আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ২ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ২৪৩ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৯ জনের।
গঙ্গায় ভাসছে সারি সারি লাশ
উত্তরপ্রদেশ-বিহার থেকে গঙ্গা এবং যমুনায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে শয়ে শয়ে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ। সেই দেহ জলে পচে-গলে মিশে যাচ্ছে। কখনও আবার মৃতদেহ নদীর চরায় পুঁতে দেওয়া হচ্ছে গেরুয়া কাপড়ে মুড়িয়ে।
সম্প্রতি এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জায়গা থেকে দেহ তুলে সৎকারের ব্যবস্থা করা হলেও, তা ঠেকানো এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
এ দিকে, দেহগুলি ভাসতে ভাসতে আচিরেই বাংলায় প্রবেশ করতে পারে, যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই মালদহ প্রশাসনকে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
তবে জলে মৃতদেহ ভাসুক বা জল থেকে তুলে ফেলে হোক, সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। যদিও জলে দেহ ভাসলেও, তা থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে আইসিএমআর’র চেয়ারম্যান বলরাম ভার্গব জানান, ভাইরাসের বেঁচে থাকার জন্য জীবিত থাকা প্রয়োজন। মৃতের শরীরে ভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারে না। ফলে সংক্রমণ ছড়াবে, এমন আতঙ্কের কারণ নেই। বরং সতর্ক থাকা উচিত দূষণের থেকে।
এ দিকে আইআইটি কানপুরের অধ্যাপক সতীশ তারে বলেন, সংক্রমণ না ছড়ালেও গঙ্গা যমুনায় এ ভাবে নির্দ্বিধায় মৃতদেহ ভাসানো খুবই সাঙ্ঘাতিক। দেশ যখন এত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন এর থেকে অন্য নানা ধরণের রোগ ছড়াতে পারে।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ