করোনাভাইরাসের প্রবল ধাক্কায় বেসামাল ভারতের বিহার রাজ্যে গঙ্গায় ভেসে এসেছে ৪০টির বেশি লাশ। করোনায় মৃত ব্যক্তিদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সোমবার (১০মে) এই খবর জানিয়ে এনডিটিভি বলছে, করোনাভাইরাস ভারতে কী প্রভাব ফেলেছে, তারই যেন প্রকাশ ঘটল নদীতে লাশের এই বহরে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, বিহার রাজ্যের বক্সারে সোমবার সকালে গঙ্গা নদীতে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্থানীয় ব্যক্তিরা নদীতে এসব লাশ দেখতে পান। লাশগুলো পচেগলে ফুলে গেছে। সেখানে তখন ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্থানীয় প্রশাসনের ধারণা, লাশগুলো উত্তর প্রদেশ থেকে ভেসে এসেছে। মৃত করোনা রোগীদের মরদেহ দাহ বা দাফনের জন্য জায়গা না পেয়ে সেগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে থাকতে পারেন স্বজনেরা।
বিহারের চৌসা জেলা কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, ৪০ থেকে ৪৫টি লাশ ভাসতে দেখা গেছে। চৌসার মহাদেবা ঘাট থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, লাশগুলো নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। কারও কারও মতে, লাশের সংখ্যা ১০০ এর কাছাকাছি।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বার্তা সংস্থা এএনআই-কে বলছিলেন, চৌসা শ্মশানঘাটের অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছিল না। আমার ধারণা, দুশো কি তিনশো কোভিড সংক্রমিত লাশ নদীতে ভেসে এসেছিল। এরপরই চারিদিকে সবার মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশাসন তো কিছুই করেনি, সিইও সাহেব এসে শুধু ওপর-ওপর সব দেখে চলে গেছেন।
তবে ঠিক কত সংখ্যক লাশ ভেসে এসেছে, তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরাও নানা রকম পরস্পরবিরোধী বিবরণ দিচ্ছেন। আরেকজন ব্যক্তি যেমন বলছিলেন, তিনি নিজেই তিরিশ-পঁয়তিরিশটা লাশ ঘাটে এসে ঠেকতে দেখেছেন। তার কথায়, তাদের কাউকে হয়তো জলপ্রবাহ দেওয়া হয়েছিল, অর্থাৎ সৎকার না-করেই দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া নদীতে আরও যে লাশগুলো ভাসছিল, সব মিলিয়ে প্রায় এক-দেড়শো লাশ ছিল বলেই আমার ধারণা। আর এর সবগুলোই যে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের লাশ ছিল, তা নিয়েও আমি নিশ্চিত”, বলছিলেন চৌসার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি।
তবে বিহারের রাজ্য প্রশাসন সরকারিভাবে এখনও স্বীকার করেনি মরদেহগুলো সব কোভিড রোগীদেরই ছিল। কিন্তু এগুলো যে সব পাশের রাজ্য থেকেই ভেসে এসেছে, সে কথা তারা জোর দিয়েই বলছেন।
বিকেলের দিকে চৌসা শ্মশানঘাটে আসেন বক্সা সদরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে কে উপাধ্যায়। তিনি বলেন, এগুলো সবই কোভিড-জনিত মৃত্যু তা কিন্তু বলা যাবে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, গঙ্গায় যে আপনারা দশ-বারোটা লাশ ভাসতে দেখছেন সেগুলো সবই কিন্তু অনেক দূর থেকে প্রবাহিত হয়ে এখানে এসেছে। এখন এটা অনুসন্ধানের বিষয় যে লাশগুলো বারাণসী না এলাহাবাদ কোথা থেকে আসছে … তবে এগুলো যে পাঁচ-সাতদিন ধরে নদীতে ভাসছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই, কারণ লাশগুলো সবই ভীষণভাবে ফুলে গেছে।
এদিকে উদ্ধার করা মরদেহ ও নদীর পানি থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় চৌসা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লাশগুলোর আশপাশে একদল কুকুরকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে, যা করোনা ছড়ানোর বিষয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে।
এর আগে গত শনিবার হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর শহরে যমুনা নদীতে কিছু লাশ ভেসে এসেছিল। লাশগুলো আংশিক পুড়ে যাওয়া ছিল। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, করোনায় মৃতের সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে। এসব লাশ সেটিই প্রমাণ করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ