হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির পর প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীরও একই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীরও একাধিক নারীর সাথে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, জাকারিয়া নোমান ফয়েজীকে গ্রেপ্তারের পর আমরা তার কাছ একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করি। সেখানে আমরা তার একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের প্রমাণ পেয়েছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তার দুই থেকে তিন জনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে।
রশিদুল বলেন, ‘তার মোবাইল থেকে আমরা বেশ কিছু চ্যাটিং পেয়েছি, যাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। আমাদের হাতে সেগুলো আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করছি না। এই নারীদের সঙ্গে তার যে যোগাযোগ ছিল এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সেটি এই চ্যাটের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। পরবর্তী তদন্তের মাধ্যমে এগুলো আমরা তুলে ধরব।’
এসপি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি এবং বলেছি আপনার যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং আপনি যে পোশাক পরেন সেটির সঙ্গে আপনার এই চরিত্র যায় কি না। তখন তিনি বলেছেন মানুষমাত্রই ভুল হয়।’
কত জনের সঙ্গে জাকারিয়া নোমান ফয়জী অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত দুই-তিন জনকে শনাক্ত করেছি, তাদের পরিচয় পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন এগুলো বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত যখন এগিয়ে যাবে, আমাদের তদন্ত যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে অনুযায়ী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সব ধরনের সঠিক তথ্য সরবরাহ করব। এখন শুধু এটুকু বলছি যে কারও কারও সঙ্গে তার অনৈতিক মনস্তাত্বিক সম্পর্ক ছিল, কারও কারও সঙ্গে তার অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক ছিল। তিনি কিন্তু বিয়ে করেছেন, এরপরও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক— এটাও একটা ক্রিমিনাল অফেন্স।’
নোমান ফয়েজী আরও বিয়ে করেছেন কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তিনি কাউকে বিয়ে করেননি। তার সঙ্গে নারীদের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং কারও সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে।’
এর আগে হেফাজতের আরেক নেতা মুফতি হারুন ইজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবার সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীকে গ্রেপ্তার করা হলো। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা তাণ্ডবের উদ্দেশ্য কী আপনাদের বলেছেন; এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তাণ্ডবের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করা। তারা চেয়েছিল পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করতে। কিন্তু তাদের ধারণা ছিল না পুলিশ এত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে।’
তাণ্ডব ঠেকাতে পুলিশ ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে রশিদুল হক বলেন, ‘এখানে ব্যর্থতার কিছুই নেই। পুলিশ প্রত্যেকটা বিষয় তদন্ত করছে। ধাপে ধাপে সবকিছু আমরা মিটআপ করব।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘কারা কারা নির্দেশ দিয়েছেন, কারা কারা অর্থের জোগান দিয়েছেন এবং কারা কারা হেফাজতের কাঁধে ভর করে রাষ্ট্রকে তথা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে সব তথ্য পুলিশের আছে। অনেকগুলো মামলা হয়েছে, সব মামলার তদন্ত চলছে। যেকোনো পর্যায়ে, যিনি হোন, যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এর আগে বুধবার (৫ মে) বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের পর আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছি। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি আরও বলেন, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী হাটহাজারীর ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার এজহারভুক্ত আসামি। এর বাইরে ওই ঘটনায় আরও যেসব মামলায় দায়ের করা হয়েছে ওই সব মামলার যেগুলোতে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে সব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে হাটহাজারীতে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এ সময় হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা নামে পরিচিত দারুল উলুম ময়নুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের করে হাটহাজারী থানায় ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি হেফাজত কর্মীরা হাটহাজারী উপজেলা ভূমি অফিস ও সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। দিনভর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। এই ঘটনার জের ধরে হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায় হেফাজত নেতাকর্মীরা। তারা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে। পাশাপাশি মাদ্রাসার সামনে ইটের দেয়াল তুলে ব্যারিকেডও দেয় হেফাজতের কর্মীরা।
সে সময় পটিয়া ও হাটহাজারী থানায় হামলা, ভূমি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথক সাতটি মামলা হয়। এসব মামলায় ৪ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
পরে গত ২২ এপ্রিল হেফাজতের নেতা-কর্মীদের আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা করে হাটহাজারী থানা-পুলিশ। এর মধ্যে দুই মামলায় হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে আসামি করা হয়। তিন মামলায় আসামি করা হয় ৩ হাজার জনকে। এর মধ্যে ১৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ