গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বাৎসরিক ছুটির পাওনা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিপি ওয়্যার লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা অন্য পোশাক কারখানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার (৫ মে) দুপুরে টঙ্গীর বিসিক এলাকার ‘বিপি ওয়্যার লিমিটেড’ নামের পোশাক কারখানায় এ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।
শ্রমিকরা জানান, কারখানা মালিক তাদের বাৎসরিক ছুটির পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। তারা পাওনা টাকার দাবিতে গত দুইদিন কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে দেখতে পান কারখানার প্রধান ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ টানানো।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তারা পার্শবর্তী ‘দিশারী এ্যাপালেস’ লিমিটেডে নামক কারখানায় ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় অন্তত ১২ শ্রমিক আহত হন। তাদের উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
কারখানাটির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মো. আহম্মেদ হুসাইন বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব।
শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (জোন-২) আব্দুল জলিল বলেন, শ্রমিকরা দুই দিন ধরে টাকার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধ পেয়ে পার্শবর্তী কারখানায় ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে আয়ের প্রধান উৎস পোশাক শিল্প। এ শিল্পে লাখো শ্রমিক দেশে করোনাকালীন লকডাউনেও কাজ করে দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে যাচ্ছেন। বিনিময়ে তারা শুধু নামমাত্র পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, এর বাইরে কিছু না। পোশাক শিল্পে শ্রমিকেরা তাদের ঘাম ঝরাচ্ছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক অধিকার থেকে তারা বরাবরের মতই বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা বলেন, শ্রমিক তার মজুরি, সুবিধা-অসুবিধা, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে মতামত মালিক পক্ষকে বলার ক্ষমতা রাখেন। এটাই স্বাভাবিক। অথচ শ্রমিক যখনই অধিকার নিয়ে সোচ্চার হন, তখনই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। পেটের দায়ে লাখো লাখো শ্রমিক মুখ বুজে সহ্য করে কাজে করে যান। আর এভাবেই তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা বলেন, বহুবারের মতো এবারও ঈদের আগে মজুরি-বেতন-বোনাস পাননি অনেক শ্রমিক। ঈদের আগে বোনাস তো দূরের কথা, নিয়মিত মাসের বেতনই হয়নি শ্রমিকদের বিরাট অংশের। যথারীতি বেতন-বোনাস বকেয়া কিংবা অপরিশোধের বেলায় এগিয়ে আছে পোশাকশিল্প খাত। এ যেন বঞ্চনার এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।
তারা বলেন, কোভিড–১৯ মহামারির মধ্যেও পোশাক খাতের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। খাতটি সচল রয়েছে শ্রমিকের আত্মত্যাগে। এর কোনো প্রতিদান না দেওয়া চরম নির্দয়তা। এই নির্দয়তার শিকারই তারা প্রতিবছর হন। করোনাকালে সময়মতো বেতন ও বোনাস না পাওয়া হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। একমাত্র সরকার কঠোর হলেই এর একটা সুরাহা হয়। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি যেন আবারও অরণ্যে রোদন হয়ে না দাঁড়ায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ