করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সোমবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে তাকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালের সিসিইউতে। এ অবস্থায় তার দল ও পরিবার চাচ্ছে তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এএম আমিনউদ্দিন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে হলে আদালতের সম্মতি লাগবে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। এখন এটা (বিদেশ নিতে) করতে গেলে আদালতে আসতে হবে, আমার মনে হচ্ছে আদালতে আসতে হবে। তারপরও আমি না দেখে বলতে পারছি না।
ওনার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন। এই খানে বাংলাদেশে কী আছে, না আছে, সবকিছু দেখে সরকার বিবেচনা করবে। সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, যদি আইন আনুযায়ী প্রয়োজন হয়, তবে আদালতে আসবে সরকার। কারণ এটা তো সরকারি আদেশ, সরকারই এটা নির্ধারণ করবে।
উন্নত চিকিৎসার বিদেশে নিতে চায় তার দল ও পরিবার
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চায় তার দল ও পরিবার। তার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার বলে বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের অন্যান্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে জানানো হবে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম সোমবার দিবাগত রাতে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত কোনো আবেদন এখনো করা হয়নি। তবে দলের নেতারা বলছেন, সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন আগেই করা আছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের আইনজীবীদের একজন ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন, ম্যাডামকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া জরুরি। এখন উপায় একটিই তাহলে সরকারকে তার দেয়া নির্বাহী আদেশ সংশোধন করে বিদেশে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা।
এখন বিদেশে পাঠাতে হলে আর তো কোন অপশন নাই। এভাবে দল বা পরিবার বা আইনজীবীদের তো করণীয় কিছু নেই। নির্বাহী আদেশ সংশোধন করলেই তাকে বিদেশে নেয়া সম্ভব হবে বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন সরকার তো সাম্প্রতিক সময়ে অনেককে সাজা থেকে ক্ষমাও করে দিয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিতে সমস্যা কোথায়।
আগেও আবেদন করা হয়েছিল বিদেশ নেবার
এর আগে গত বছরের মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিলো খালেদা জিয়ার পরিবার। তার বোন সেলিমা ইসলাম তখন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে এই চিঠিতে আমরা লিখেছি যে, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইছি। সেজন্য তার মুক্তি প্রয়োজন। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।
তবে সেই চিঠিতে তখন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিলো বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। এখন বিএনপি নেতারা বলছেন, ওই আবেদনের ভিত্তিতেই সরকার মুক্তির আদেশ সংশোধন করলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া সম্ভব হবে।
৭৫ বছ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে আরও দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানে ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ