জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’র কোনো টাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেননি বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আসিফ হাসান। ওই টাকা ট্রাস্টের ফান্ডেই রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে করা লিভ টু আপিল শুনানি হয়।
শুনানিতে দুদকের আইনজীবী জানান, মামলার নথিপত্র অনুযায়ী দেখা যায় ট্রাস্টের দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা ট্রান্সফার হয়েছে; কেউ তা আত্মসাৎ করেনি। এদিকে এ মামলায় আগামীকাল লিভ টু আপিলের আদেশের দিন নির্ধারণ করেছে আপিল বিভাগ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।
এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়ে সোমবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিলের রায়ে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছিলেন খালেদা জিয়া। আবেদনটি মঞ্জুর করে এ আদেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার লিভ টু আপিলের দ্রুত শুনানি করতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আপিলের পেপার বুক তৈরির অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা।
গত ৩ নভেম্বর দুটি আবেদনই মঞ্জুর করে আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠলে আদালত আদেশের জন্য রাখে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।
আদেশের বিষয়ে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদালত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। এই আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
“অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সার সংক্ষেপ তৈরি করতে বলা হয়েছে। আশা করছি, দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সারসংক্ষেপ জমা দিতে পারব।”
তারপর মূল আপিল শুনানির আবেদন করা হবে জানিয়ে খালেদা জিয়ার এ আইনজীবী বলেন, “এখন বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ নেই বলে আমরা মনে করি। ফলে আপিলটি দ্রুত শুনানি করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।”
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতি হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে, তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছিলেন তার আইনজীবীরা। তাদের ভাষ্য, ট্রাস্টের এক টাকাও আত্মসাৎ বা তছরুপ হয়নি। নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা আছে।
লিভ টু আপিলের শুনানিতে এই কথাই বলেন দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। তিনি আদালতকে বলেন, “এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনও টাকা ব্যয় হয়নি।”
আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “দুদকের আইনে নেই বিচারিক আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা যাবে। তারপরও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একতরফা শুনানি করে হাইকোর্ট দুঃখজনকভাবে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে।
“আমরা মনে করি, রাষ্ট্রীয়ভাবে আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করা হয়েছে, অন্যায় করা হয়েছে। আশা করি, সর্বোচ্চ আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাবেন।”
অনাথ শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ে খালেদা জিয়াসহ ৬ আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেয়। রায়ে সাজা বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, দুটি মামলাসহ সব মামলা খালেদা জিয়া আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ